সাহিত্য তার জায়গা থেকে সরে গেলে দুর্যোগ নেমে আসে: অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান
- প্রকাশের সময় : ০৫:২০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৫৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
দেশের খ্যাতনামা লেখক গবেষক ও চিন্তক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, জীবনের সততা বা সত্য তুলে ধরাই সাহিত্যের কাজ। যখনই সাহিত্য সেখান থেকে দূরে সরে যায় সেটা জাগতিক সাফল্যের জন্য হতে পারে, অনেক সময় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য হতে পারে। তখন জাতির জন্য, দেশের জন্য, জনসমাজের জন্য এক দুর্যোগ নেমে আসে। আমরা তেমনই একটা দুর্যোগ পেরিয়ে এসেছি বলতে পারলে খুশী হতাম। কিন্তু আমরা সেটা অতিক্রম করেছি কীনা এখনও পরীক্ষার ব্যাপার।
রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সাহিত্য বৈঠকে প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হিসেবে সাম্য মানিবক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার গত ৫০ বছরে তা ক্রমশই দূরে সরে গিয়েছে। তার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে আমাদের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ^াস হারিয়ে যেতে বসেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আমাদের তরুণ সমাজ বিশেষ করে তাদেরকে সমর্থন করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক পরিবর্তনে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদ দিলে সকলেই খুশী হয়েছে। কিন্তু দেশ আজ অজানা অবস্থার মধ্যেই আছে। আমরা শুধু আশা করতে পারি, এই অবস্থায় আমাদের দেশে মত প্রকাশ, বাক স্বাধীনতা, সাহিত্য রচনার সুযোটা কমবে না বরং বাড়তে পারে। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাহিত্য যে অবস্থায় ছিল তা এক অন্ধকার যুগ। সাহিত্যের দিকে যদি তাকাই আমি সাহিত্যের সবকিছু পড়িনি, অন্তত যেটুকু পড়েছি। আমরা কথা বলি নমুনার ভিত্তিতে। গল্প উপন্যাস বা কথা সাহিত্য বা কবিতা, নাটক এর সবগুলো মিলিয়ে যদি বলেন তাহলে ক্রমশ আমরা এক ধরনের আত্ম সন্তুষ্টিতে ছিলাম। যার ফলে সাহিত্য ক্রমেই প্রশ্নহীন হয়ে উঠছিল। অনেকের ধারণা সাহিত্য হচ্ছে আমোদ বা বিনোদনের সামগ্রী। কিন্তু সাহিত্য হচ্ছে জীবনের পর্যালোচনা। ক্রিটিসিজমের কথা এই নয় যে, আমি জীবনকে সমালাচনা করে ফেলে দিচ্ছি। ক্রিটিসজম মানে ভালো করে চিবিয়ে তার রসটা হজম করা এবং যা কিছু অপাঙক্তেয় তাকে পংক্তির বাইরে ফেলে দেওয়া। সে হিসেবে দেখলে জীবনের সততা বা সত্য তুলে ধরাই সাহিত্যের কাজ। যখনই সাহিত্য সেখান থেকে দূরে সরে যায় সেটা জাগতিক সাফল্যের জন্য হতে পারে, অনেক সময় গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য হতে পারে। তখন জাতির জন্য, দেশের জন্য, জনসমাজের জন্য এক দুর্যোগ নেমে আসে। আমরা তেমনই একটা দুর্যোগ পেরিয়ে এসেছি বলতে পারলে খুশী হতাম। কিন্তু আমরা সেটা অতিক্রম করেছি কীনা এখনও পরীক্ষার ব্যাপার। এই পরীক্ষামূলক সময়ে রাজবাড়ী আসতে পেরে আনন্দ প্রকাশের অবকাশ হলো।
তিনি আরও বলেন, গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন হলো তার পেছনে অনেক মানুষের রক্ত, অনেক মানুষের অশ্রæ, অনেক মানুষের আত্মত্যাগ ছিল। যেটার হয়তো কোনো প্রয়োজনই হতো না, যদি আমরা ১৯৭১ সালের আদর্শকে সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারতাম বা পালন করতে পারতাম। এই যে বিপুল মানবসম্পদ ধ্বংস হলো, মানুষের প্রাণ গেল, সবচেয়ে বড় কথা মানুষের বিশ্বাসের অপচয় হলো এটা ভাবতেই মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নাসিম শফির সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তৃতা করেন ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতি ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজা খানম, সহসভাপতি ডা. আবুল হোসেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, সহসভাপতি নুরুল হক আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি খোকন মাহমুদ।
পরে রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক মলিমুল্লাহ খানকে সাহিত্য পদক হিসেবে ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।