Dhaka ১০:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে \ নেই স্কুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি রাস্তাও

রাজবাড়ীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রাম

সৌমিত্র শীল চন্দন
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪
  • / ১১২৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

রাজবাড়ী শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরত্ব। মাঝখানে পদ্মা নদী এলাকাটিকে নিয়ে গেছে যোজন যোজন দূরে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম চর মৌকুড়ি, কাঠুরিয়া ও আমবাড়িয়া। দুর্গম চরাঞ্চলের এই তিনটি গ্রামের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সবদিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানে নেই কোনো স্কুল, নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এমনকি চলাচলের জন্য রাস্তাও নেই। স্কুল না থাকায় ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রসূতি অথবা জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষকে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষি পণ্য শহরে নিতে যে খরচ পড়ে তাতে পরিবহন খরচ ওঠাই দায় হয়ে পড়ে তাদের। বর্ষাকালে তাদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। নদীর পানি উপচে যখন গ্রামে ঢোকে তখন তারা আর সেখানে বাস করতে পারেন না। আশ্রয়ের জন্য যেতে হয় আত্মীয় স্বজন অথবা কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে। এভাবেই নানামুখি সমস্যার মধ্যে দিয়ে কাটছে তাদের জীবন।

সম্প্রতি দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষিকাজ ও মাছ ধরাই তাদের জীবন জীবীকার উৎস। ধান, পাট, নানান রকম সবজি তারা চাষ করেন। নিজেরা যা চাষ করেন তাই পরিবারের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের চাহিদা খুব বেশি নয়। মোটা কাপড় আর মোটা ভাত পেলেই খুশী তারা। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগের কারণ। তার মধ্যে একটি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেন না এলাকায় স্কুল না থাকার কারণে। ছোট থাকতেই ছেলেকে বাবার সাথে কাজে পাঠানো হয়। মেয়েরা বড় হতে থাকে গৃহস্থালী কাজ কর্র্ম করতে করতে। গ্রামে কোনো রাস্তা না থাকায় চলাচল করেনা কোনো গাড়ি। খুব বেশি প্রয়োজন হলে ঘোড়ারগাড়ি ভাড়া করা হয়। যেটি চলে ক্ষেতের মধ্যে দিয়েই। বৃষ্টি হলে কর্দমাক্ত হয়ে হেঁটে চলাচল করাই দায় হয়ে যায়। দুর্গম এই চর থেকে রাজবাড়ী শহরে যাওয়ার মাধ্যম নৌকা। চর থেকে সোনাকান্দর ঘাটে যেতে হয় পায়ে হেঁটে। সেখান থেকে নৌকায় ওই পাড়ে মৌলভীর ঘাটে যেতে লাগে প্রায় আধা ঘণ্টা। নৌকা পাওয়া যায় না সব সময়। একটি ট্রলারে কম পক্ষে ৩০ জন যাত্রী হলে তবেই নৌকা ছাড়ে। ঘাটে তপ্ত রোদে কোনো কোনো সময় দেড় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত করতে হয় অপেক্ষা। মৌলভী ঘাট থেকে শহরে যেতে কোনো বেগ পেতে হয়না।

 কথা হয় মৌকুরি চরের গৃহবধূ রেবেকা খাতুনের সঙ্গে। জানালেন, তার তিন ছেলে। ২০ বছর বয়সী বড় ছেলে নৌকায় কাজ করে। ১৫ বছর বয়সী মেজ ছেলে থাকে ঢাকায়। আর ১০ বছর বয়সী ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। ছোট ছেলে স্কুলে পড়লেও নিয়মিত তার স্কুলে যাওয়া হয়না। স্কুল নদীর ওই পাড়ে। নৌকায় করে যেতে হয়। শিশু সন্তানকে নৌকায় পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এভাবে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত উঠেছে। আর কতদূর যেতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই। জানালেন, এ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় প্রসূতি মায়েদের হামেশায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারও প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারটির উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অন্ত থাকে না। গ্রামে রাস্তা না থাকায় অনেক দূর হেঁটে যেতে হয় নৌকাঘাটে। নৌকাও সব সময় পাওয়া যায়না। দীর্ঘ পথ নদী পাড়ি দিয়ে ওই পাড়ে পৌঁছাতে হয়। তারপর যেতে হয় হাসপাতালে। এতে অনেক প্রসূতি নারী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

 রেবেকা খাতুনের স্বামী বাচ্চু শেখ অষ্টম শ্রেণি পাশ। এ এলাকায় তিনিই একটু শিক্ষিত। জানালেন, শহরে এক স্বজনের বাড়িতে ছিলেন বলে লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন। অনেক ইচ্ছা থাকার পরও ছেলেদের পড়াশোনা করাতে পারেননি। এখন কৃষিকাজ করেন তিনি। এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ছাড়াও আর একটি সমস্যা আছে। মাঝে মধ্যেই ঘটে চুরির ঘটনা। কিছুদিন আগে তাদের পাশের বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকা দামের একটি ষাঁড় গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। চুরির ঘটনা বেশি বাড়ে বর্ষাকালে। তখন পানি বাড়ির কাছাকাছি চলে আসে। দুর্বৃত্তরা ট্রলারে করে এসে চুরি করে পালায়। এমন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারা বাস করেন এখানে।

মৌকুড়ির পাশের গ্রাম কাঠুরিয়া গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা আজিবর সরদার পেশায় কৃষক। জানালেন, রাস্তা না থাকায় সবজি মাথায় করে নৌকা ঘাটে আনতে হয়। এরপর এক মণ সবজি শহরে নিতে খরচ পড়ে আড়াইশ টাকার মত। দুপুরে রেস্তোঁরায় খেতে আরও একশ টাকা খরচ হয়। সবজি বিক্রি করে যে টাকা পান তাতে খরচই ওঠেনা। আলাপচারিতায় তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর আগে তার দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। জানালেন, ছোট ছেলে যখন অসুস্থ হয় তখন হাসপাতালে নেওয়া খুব জরুরি ছিল। কিন্তু সময়মতো নৌকা না পাওয়ায় ছেলেকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারেননি। যেকারণে মৃত্যু হয়।

ষাটোর্ধ্ব নুরুল ইসলাম শেখ, ইমান আলী সরদারসহ কথা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। তারা জানালেন, এ এলাকার মানুষ তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর কথা চিন্তাও করতে পারেন না। নদী পাড়ি দিয়ে কেউ ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে চায়না। জীবনের ঝুঁকি থাকে সব সময়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মন্ডল জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এ এলাকার উন্নয়ন করা খুবই জরুরী। কিন্তু কেউ এলাকা নিয়ে ভাবেনা। তিনি এ এলাকায় একটি স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার দাবি জানান।

মিজানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. টুকু মিজি জানান, চরাঞ্চলটি খুবই অবহেলিত। নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর যোগাযোগের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তার জন্য কেউ জায়গা দিতে চায়না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার জানান, সেখানে একটি স্কুল নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল করার মত উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় স্কুলটি করা যায়নি। যদি কেউ জায়গা দেয় তাহলে একটি স্কুল নির্মাণ করা হবে।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহীম টিটন জানান, কেউ জমি দান করলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীকে বিশেষ নজর রাখার জন্য তিনি নির্দেশনা দেবেন।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জানান, এলাকাটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে \ নেই স্কুল স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি রাস্তাও

রাজবাড়ীর দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রাম

প্রকাশের সময় : ০৬:১০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

রাজবাড়ী শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরত্ব। মাঝখানে পদ্মা নদী এলাকাটিকে নিয়ে গেছে যোজন যোজন দূরে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম চর মৌকুড়ি, কাঠুরিয়া ও আমবাড়িয়া। দুর্গম চরাঞ্চলের এই তিনটি গ্রামের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সবদিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানে নেই কোনো স্কুল, নেই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এমনকি চলাচলের জন্য রাস্তাও নেই। স্কুল না থাকায় ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রসূতি অথবা জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষকে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কৃষি পণ্য শহরে নিতে যে খরচ পড়ে তাতে পরিবহন খরচ ওঠাই দায় হয়ে পড়ে তাদের। বর্ষাকালে তাদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। নদীর পানি উপচে যখন গ্রামে ঢোকে তখন তারা আর সেখানে বাস করতে পারেন না। আশ্রয়ের জন্য যেতে হয় আত্মীয় স্বজন অথবা কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে। এভাবেই নানামুখি সমস্যার মধ্যে দিয়ে কাটছে তাদের জীবন।

সম্প্রতি দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষিকাজ ও মাছ ধরাই তাদের জীবন জীবীকার উৎস। ধান, পাট, নানান রকম সবজি তারা চাষ করেন। নিজেরা যা চাষ করেন তাই পরিবারের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের চাহিদা খুব বেশি নয়। মোটা কাপড় আর মোটা ভাত পেলেই খুশী তারা। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগের কারণ। তার মধ্যে একটি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেন না এলাকায় স্কুল না থাকার কারণে। ছোট থাকতেই ছেলেকে বাবার সাথে কাজে পাঠানো হয়। মেয়েরা বড় হতে থাকে গৃহস্থালী কাজ কর্র্ম করতে করতে। গ্রামে কোনো রাস্তা না থাকায় চলাচল করেনা কোনো গাড়ি। খুব বেশি প্রয়োজন হলে ঘোড়ারগাড়ি ভাড়া করা হয়। যেটি চলে ক্ষেতের মধ্যে দিয়েই। বৃষ্টি হলে কর্দমাক্ত হয়ে হেঁটে চলাচল করাই দায় হয়ে যায়। দুর্গম এই চর থেকে রাজবাড়ী শহরে যাওয়ার মাধ্যম নৌকা। চর থেকে সোনাকান্দর ঘাটে যেতে হয় পায়ে হেঁটে। সেখান থেকে নৌকায় ওই পাড়ে মৌলভীর ঘাটে যেতে লাগে প্রায় আধা ঘণ্টা। নৌকা পাওয়া যায় না সব সময়। একটি ট্রলারে কম পক্ষে ৩০ জন যাত্রী হলে তবেই নৌকা ছাড়ে। ঘাটে তপ্ত রোদে কোনো কোনো সময় দেড় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত করতে হয় অপেক্ষা। মৌলভী ঘাট থেকে শহরে যেতে কোনো বেগ পেতে হয়না।

 কথা হয় মৌকুরি চরের গৃহবধূ রেবেকা খাতুনের সঙ্গে। জানালেন, তার তিন ছেলে। ২০ বছর বয়সী বড় ছেলে নৌকায় কাজ করে। ১৫ বছর বয়সী মেজ ছেলে থাকে ঢাকায়। আর ১০ বছর বয়সী ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারেননি। ছোট ছেলে স্কুলে পড়লেও নিয়মিত তার স্কুলে যাওয়া হয়না। স্কুল নদীর ওই পাড়ে। নৌকায় করে যেতে হয়। শিশু সন্তানকে নৌকায় পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এভাবে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত উঠেছে। আর কতদূর যেতে পারবে তার নিশ্চয়তা নেই। জানালেন, এ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় প্রসূতি মায়েদের হামেশায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারও প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারটির উদ্বেগ উৎকণ্ঠার অন্ত থাকে না। গ্রামে রাস্তা না থাকায় অনেক দূর হেঁটে যেতে হয় নৌকাঘাটে। নৌকাও সব সময় পাওয়া যায়না। দীর্ঘ পথ নদী পাড়ি দিয়ে ওই পাড়ে পৌঁছাতে হয়। তারপর যেতে হয় হাসপাতালে। এতে অনেক প্রসূতি নারী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

 রেবেকা খাতুনের স্বামী বাচ্চু শেখ অষ্টম শ্রেণি পাশ। এ এলাকায় তিনিই একটু শিক্ষিত। জানালেন, শহরে এক স্বজনের বাড়িতে ছিলেন বলে লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন। অনেক ইচ্ছা থাকার পরও ছেলেদের পড়াশোনা করাতে পারেননি। এখন কৃষিকাজ করেন তিনি। এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ছাড়াও আর একটি সমস্যা আছে। মাঝে মধ্যেই ঘটে চুরির ঘটনা। কিছুদিন আগে তাদের পাশের বাড়ি থেকে দেড় লাখ টাকা দামের একটি ষাঁড় গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। চুরির ঘটনা বেশি বাড়ে বর্ষাকালে। তখন পানি বাড়ির কাছাকাছি চলে আসে। দুর্বৃত্তরা ট্রলারে করে এসে চুরি করে পালায়। এমন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তারা বাস করেন এখানে।

মৌকুড়ির পাশের গ্রাম কাঠুরিয়া গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দা আজিবর সরদার পেশায় কৃষক। জানালেন, রাস্তা না থাকায় সবজি মাথায় করে নৌকা ঘাটে আনতে হয়। এরপর এক মণ সবজি শহরে নিতে খরচ পড়ে আড়াইশ টাকার মত। দুপুরে রেস্তোঁরায় খেতে আরও একশ টাকা খরচ হয়। সবজি বিক্রি করে যে টাকা পান তাতে খরচই ওঠেনা। আলাপচারিতায় তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর আগে তার দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। জানালেন, ছোট ছেলে যখন অসুস্থ হয় তখন হাসপাতালে নেওয়া খুব জরুরি ছিল। কিন্তু সময়মতো নৌকা না পাওয়ায় ছেলেকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারেননি। যেকারণে মৃত্যু হয়।

ষাটোর্ধ্ব নুরুল ইসলাম শেখ, ইমান আলী সরদারসহ কথা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। তারা জানালেন, এ এলাকার মানুষ তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর কথা চিন্তাও করতে পারেন না। নদী পাড়ি দিয়ে কেউ ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে চায়না। জীবনের ঝুঁকি থাকে সব সময়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মন্ডল জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ সব দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এ এলাকার উন্নয়ন করা খুবই জরুরী। কিন্তু কেউ এলাকা নিয়ে ভাবেনা। তিনি এ এলাকায় একটি স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার দাবি জানান।

মিজানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. টুকু মিজি জানান, চরাঞ্চলটি খুবই অবহেলিত। নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর যোগাযোগের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তার জন্য কেউ জায়গা দিতে চায়না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরীন আক্তার জানান, সেখানে একটি স্কুল নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল করার মত উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় স্কুলটি করা যায়নি। যদি কেউ জায়গা দেয় তাহলে একটি স্কুল নির্মাণ করা হবে।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহীম টিটন জানান, কেউ জমি দান করলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীকে বিশেষ নজর রাখার জন্য তিনি নির্দেশনা দেবেন।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জানান, এলাকাটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।