দেশের একমাত্র এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটির জীর্ণদশা
- প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ মে ২০১৮
- / ১৯৬৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥যাদের নয়নাভিরাম অনিন্দ্য সুন্দর ক্রীড়াশৈলী মানুষকে মুগ্ধ করে। দেয় আনন্দ। প্রাণভরে উপভোগ করে ছন্দময় সব প্রদর্শনী। কখনও বাঁশের উঁচুতে উঠে, কখনও রিং নিয়ে আবার কখনও ড্রাম নিয়ে প্রদর্শনীগুলো সত্যিকার অর্থেই চমৎকার ও চিত্তাকর্ষক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুগ্ধ হয়েছেন তাদের পারফরম্যান্সে। এ্যক্রোবেটিক শিল্পীদের জন্য এই প্রশি—গণ কেন্দ্রটি রাজবাড়ীতে অবস্থিত। এটিই দেশের একমাত্র এ্যক্রোবেটিক সেন্টার। অথচ দীর্ঘকাল যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় জীর্ণ দশায় পরিণত হয়েছে সেন্টারটি। রয়েছে জনবলের সংকট। সঠিক পরিচর্যার অভাবে হলর¤œমসহ অন্যান্য ভবনগুলোও নষ্ট হওয়ার পথে। কর্তৃপ—গ জানিয়েছে, কিছু জটিলতার কারণে এর যতটা উন্নয়ন হওয়া দরকার ছিল তা হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়িই এটির উন্নয়নে কার্যকর পদ—েগপ নেয়া হবে।
রাজবাড়ী এ্যক্রোবেটিক সেন্টার সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্রীপুর এলাকায় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটি। ওই সময় ফাইন এন্ড পারফরমিং আর্ট নামে একটি প্রকল্পের আওতায় এর কার্যক্রম শুর¤œ হয়। ৪০ জন পারফরমার এর জন্য হোস্টেলে থাকা খাওয়ার বন্দোব¯ত্ম ছিল তখন। মাসিক ভাতাও পেতেন তারা। ২০০৫ সালে ফাইন এন্ড পারফরমিং আর্টÑ২ নামে প্রকল্পের কার্যক্রম শুর¤œ হয়। ২০০৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগ করা হয়; ফাইন এন্ড পারফরমিং আর্টÑ২ নামে যে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল তা ঠিকাদারকে নিয়ম মেনে দেয়া হয়নি। ঠিকাদারের বির¤œদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হলে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছু দিন পর এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটি র্যাব ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। র্যাব ক্যম্প তুলে নেয়ার পর ২০১২ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটি আবারও চালু করার উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালে সার্বিক বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করার জন্য হাইকোর্ট একটি কমিটি করে দেন। একমিটির সদস্যরা ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা), বুয়েটের একজন শি—গক, রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে হাইকোর্ট রায় দেন সরকার ঠিকাদারের কাছে টাকা পাবে এবং সরকারই ঠিক করবে যে প্রকল্পটি চালু ছিল সেটি অব্যাহত রাখবে কীনা।
বর্তমানে এই সেন্টারটিতে প্রশি—গণার্থী রয়েছে ৩২ জন। যাদের মধ্যে গত বছর ১০ জন চীন থেকে প্রশি—গণ নিয়ে এসেছে। এ্যক্রোবেটিক কার্যক্রম চালু আছে থাকলেও সেন্টারটির একটি হলর¤œম, দুটি ছাত্রাবাস, একটি অফিসার্স ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন ও দুটি ডাইনিং র¤œম সবকিছুই জীর্ণদশায় পরিণত হয়েছে। মূল প্রশি—গণ যেখানে হয় সেই হলর¤œমের বোর্ড, সিলিং খসে খসে পড়ছে। নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা। এ্যক্রোবেটিক সরঞ্জামাদি রাখার জায়গাও নেই। ফাটল ধরেছে হলর¤œমটিতে। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই প্রশি—গণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক্রোবেটিক সেন্টারটি পরিচালনার জন্য একজন পরিচালক, একজন উপÑপরিচালক, একজন হিসাবর—গক, একজন অফিস সহকারী থাকার কথা থাকলেও কিছুই নেই। রয়েছে কেবল দুজন এমএলএসএস আর দুজন নৈশ প্রহরী। যদিও সেন্টারটির কার্যক্রমের ঢিমেতালের কারণে তারাও ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। আর এ সুযোগে সেন্টারটির মধ্যে মাদকসেবীরা আসর জমায়।
প্রশি—গণার্থীরা জানান, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১০ জন প্রশি—গণার্থী চীনে প্রশি—গণে যায়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রশি—গণ নিয়ে ফিরে আসে তারা। নতুন প্রশি—গণার্থী যারা রয়েছে তারা মাসে তিন হাজার টাকা ভাতা পেলেও পুরনো যারা তারা কিছুই পাননা। শুধুই প্রদর্শনীর উপর তাদের নির্ভর থাকতে হয়। তারা এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটি সংস্কার, সকল প্রশি—গণার্থীর জন্য উচ্চতর প্রশি—গণের ব্যবস্থা, সকল প্রশি—গণার্থীর জন্য নিয়মিত বেতন ভাতা দেয়ার দাবি জানান। তাহলে এই এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটি আšত্মর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে তারা রিং ড্যান্স. জলি সিমেন্স, হ্যান্ড স্কিল, ক্যাপ ড্যান্স, রিং জাম্প, রোপ রাউন্ড, জাল ব্যালেন্সিং, বডি ব্যালেন্স, রোলার ব্যালেন্স, মাউথ স্কিল, ব্রিক স্কিল, ব্যারেল ব্যালেন্স, ব্যম্বু ও ফায়ার ড্যান্স, নেক আয়রন বার, টপ টু অ্যম্বেলা, চেয়ার সেটিং ইত্যাদি ইভেন্ট বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছেন তারা।
বর্তমানে এ্যক্রোবেটিক সেন্টারটিতে টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করছেন সঞ্জয় ভৌমিক। যিনি নিজেও চীন থেকে প্রশি—গণ নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এ্যক্রোবেটিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি সুস্থধারার একটি শিল্প মাধ্যম। এই শিল্প মাধ্যমকে যদি পরিচর্যা করা যায়, সুযোগ সুবিধা দেয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আমরা বেশ সুনাম অর্জন করেছি। আমাদের ভালো একটি ট্রেনিং সেন্টার দরকার। প্রশি—গণার্থীদের আরও উচ্চতর প্রশি—গণ দিলে আšত্মর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়ে উঠবে সেন্টারটি। এছাড়া প্রশি—গণার্থীদের যদি বেতন ভাতার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তারা এই শিল্পকেই পেশা হিসেবে নিতে পারে।
রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাশ বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুর¤œ হলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে এর কার্যক্রম থমকে গিয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এই সেন্টারটি উজ্জীবীত করার জন্য সদা সচেষ্ট। তিনি চীনে গিয়ে এ্যক্রোবেটিক কার্যক্রম প্রত্য—গ করেছেন। সেই আদলে আমাদের এখানেও ট্রেনিং সেন্টার করার চিšত্মা ভাবনা করছেন।
তিনি আরওে বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটাকে আধুনিক এ্যক্রোবেটি সেন্টার হিসেবে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এ্যক্রোবেটিক শিল্পীদের এপেশায় ধরে রাখতে হলে তাদের মাসিক সম্মানীর মধ্যে আনতে হবে। একই সাথে অবকাঠামো, বরাদ্দ এবং জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে এ্যক্রোবেটিক শিল্পকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো। ইতিমধ্যে ১০ জনকে চীন থেকে প্রশি—গণ দিয়ে আনা হয়েছে। আরও ১০ জন প্রশি—গণের জন্য চীনে গিয়েছে। চীনের সাথে তিন বছরের একটা চুক্তি হচ্ছে। তাদের মতো অত্যাধুনিক ট্রেনিং সেন্টার করার চিšত্মা ভাবনা রয়েছে।