Dhaka ০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবিতে ছদ্মবেশে ৪ মাস ক্লাস, মায়ের স্বপ্ন পূরণের অভিনয়ে ‘ভুয়া শিক্ষার্থী’ আটক

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 31

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মবেশে চারমাস ক্লাস করার পর এক ‘ভুয়া শিক্ষার্থী’ আটক হয়েছে। ওই বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তবে, আটক শিক্ষার্থীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি অভিনয় করে আসছিলেন।

গতকাল শনিবার ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে বিষয়টি জানান। পরে রাতের দিকে তাকে প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম নাভিক রহমান। গত চারমাস ধরে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস করছিলেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে নাভিক জানিয়েছেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ না পাওয়ায় মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করে আসছিলেন তিনি।

নাভিক রহমানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবিও রয়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। এছাড়া, তার ফ্রেন্ডলিস্টে আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অনেকে যুক্ত থাকতে দেখা গেছে।

বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শ্রেণি প্রতিনিধি (সি.আর) মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাস মত রোল কল করা হতো না। ওইসময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেতো না। তবে, বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করতো নিয়মিত। আমাদের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি যে, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।

বিভাগটির ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, তার বিষয়ে ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন ভুয়া পরিচয় বের হয়ে আসে। এমনকি সে তার গার্ডিয়ান হিসেবে যাদেরকে ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিস নিয়ে গিয়ে নাভিক ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মত।

গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কিনা তা তদন্তের দাবি জানিয়ে এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমাদের সতর্ক থাকা দরকার আমাদের বিভাগের নিরাপত্তা নিয়ে। একজন ৪ মাস যাবৎ ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শনাক্ত করতে পারে নি, এটা চরম ব্যর্থতা।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, তাকে রাতে আটক করা হয়েছে। আমি স্বশরীরে তখন উপস্থিত হতে পারিনি। প্রক্টর স্যারের সঙ্গে অল্প কথা হয়েছিল। আজ বিস্তারিত কথা বলার পরে এবিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো। এটুকু জেনেছি যে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না। তাই, সে আদৌ ক্লাস করেছে কিনা, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই ভালো বলতে পারবে।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল যে, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই, মাকে খুশী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতোদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।

এবিষয়ে জানতে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেকের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাবিতে ছদ্মবেশে ৪ মাস ক্লাস, মায়ের স্বপ্ন পূরণের অভিনয়ে ‘ভুয়া শিক্ষার্থী’ আটক

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মবেশে চারমাস ক্লাস করার পর এক ‘ভুয়া শিক্ষার্থী’ আটক হয়েছে। ওই বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তবে, আটক শিক্ষার্থীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি অভিনয় করে আসছিলেন।

গতকাল শনিবার ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে বিষয়টি জানান। পরে রাতের দিকে তাকে প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম নাভিক রহমান। গত চারমাস ধরে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস করছিলেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে নাভিক জানিয়েছেন, তার মায়ের অনেক আশা ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ না পাওয়ায় মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করে আসছিলেন তিনি।

নাভিক রহমানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, অ্যাকাউন্টে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবিও রয়েছে। এছাড়া আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। এছাড়া, তার ফ্রেন্ডলিস্টে আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও অনেকে যুক্ত থাকতে দেখা গেছে।

বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শ্রেণি প্রতিনিধি (সি.আর) মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক মাস মত রোল কল করা হতো না। ওইসময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেতো না। তবে, বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করতো নিয়মিত। আমাদের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি যে, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।

বিভাগটির ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ বলেন, তার বিষয়ে ব্যাচমেটদের সন্দেহ হলে তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন ভুয়া পরিচয় বের হয়ে আসে। এমনকি সে তার গার্ডিয়ান হিসেবে যাদেরকে ডেকেছিল, তারাও ভুয়া। এরপর বিভাগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে প্রক্টর অফিস নিয়ে গিয়ে নাভিক ও তার ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত চার মাসে বিভাগের সবকিছুতে সে উপস্থিত ছিল একদম প্রফেশনাল স্পাই এজেন্টের মত।

গুপ্তচর প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কিনা তা তদন্তের দাবি জানিয়ে এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমাদের সতর্ক থাকা দরকার আমাদের বিভাগের নিরাপত্তা নিয়ে। একজন ৪ মাস যাবৎ ক্লাস করেছে, প্রতিটা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অথচ আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শনাক্ত করতে পারে নি, এটা চরম ব্যর্থতা।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, তাকে রাতে আটক করা হয়েছে। আমি স্বশরীরে তখন উপস্থিত হতে পারিনি। প্রক্টর স্যারের সঙ্গে অল্প কথা হয়েছিল। আজ বিস্তারিত কথা বলার পরে এবিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো। এটুকু জেনেছি যে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না। তাই, সে আদৌ ক্লাস করেছে কিনা, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই ভালো বলতে পারবে।

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল যে, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই, মাকে খুশী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতোদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।

এবিষয়ে জানতে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেকের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।