‘রাজনৈতিক দল-আমলারা স্থানীয় সরকারকে চাকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে’
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৭:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৩২ জন সংবাদটি পড়েছেন
রাজনৈতিক দলগুলো ও আমলারা স্থানীয় সরকারকে চাকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: জনপ্রশাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, একটি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার ওপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। নানামুখি সেবা জনগণকে দিতে হবে। আমাদের জনপ্রশাসনে ঘাটতি আছে। সার্বিকভাবে পুরো সিস্টেম ব্রোকার সিস্টেমে আটকে আছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই -আগস্টের পর প্রকাশ্য দুর্নীতি কমে গেছে, সেসঙ্গে কমেছে কাজের গতিও। সার্বিকভাবে মেধার অপচয় কমাতে হবে। মেধার অপচয় আমাদের প্রশাসনে বেশি হয়ে থাকে।
সংস্কার শব্দটি প্রচলিত হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ শব্দটির আরও বিশ্লেষণ করা দরকার। এর ভেতর অনেক দিক আছে।
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি শক্তিশালী হলে কার্যত জনপ্রশাসন তৈরি হবে। স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো ও আমলারা আমাদের স্থানীয় সরকারকে চাকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বায়ত্তশাসিত থাকেছে না। এটি এক শ্রেণির আমলাদের পদায়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পদগুলো ধীরে ধীরে অ্যাডমিন ক্যাডারে চলে গিয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা না দিলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক অঙ্গগুলোকে ঠিক করার কাজ বর্তাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ অঙ্গগুলোর দলীয়করণ করা হয়েছে এবং তারা দলীয় চাপ তৈরির অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারে যুক্ত করতে হবে।
সিজিএস এর চেয়ার মুনিরা খানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালণায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সুজনের সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ রাইফেলস এর সাবেক মহাপরির্দশ মেজর জেনারেল অ ল ম ফজলুর রহমান, সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আওয়াল মজুমদার, সাবেক সচিব সুলতান আফরোজ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সচিব ইব্রাহিম খান, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমরা আমিন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ এর সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়ার সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফফাহ আসসারয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাস্সির।
সংলাপের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন অস্থিরতার মধ্যে আছে। কিন্তু সম্ভাবনার মধ্যেও আছে। এত বছর জনগণের কোন অধিকার ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। ৯০-এর দশকে, ২০০৭-০৮ এটিও সংস্কারের কথা উঠেছিলো। কিন্তু এ শব্দটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। ২৪- এর অভ্যুত্থানের পর আমরা নতুন যাত্রা শুরু করেছি। এ নতুন যাত্রার শুরুর থেকেই আমরা হতাশা ও আশঙ্কায় ভুগছি। আমরা সংস্কার আগে করব নাকি নির্বাচন আগে করব? এইটা নিয়ে জনগণ শঙ্কায় আছে। যে কোনটি আগে করা উচিত হবে। যদিও আমরা এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। কিন্তু এখনও কথা বলতে আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ দেশে ব্রিটিশরা জনপ্রশাসন তৈরি করেছে। সেখানে দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া হতো। তাদের কাজ ছিল ব্রিটিশদের রাজত্ব এখানে স্থায়ী করা। তাদের উত্তরাধিকার এখনো আমরা দেখতে পাই। আমাদের দেশে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রশাসন তৈরি করা হয়েছে তা এখনো পূরণ করতে পারেনি। জনপ্রশাসন জনগণের জন্য কাজ করবে। ২০০৭- ০৮ এ যদি সংস্কার করা হতো তাহলে আজকে আমাদের এ অবস্থা হতো না। যারা অপরাধ করেছে তাদের ন্যায় বিচারের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে কোনো স্বৈরাচার যেন আবার এমন না করতে পারে এটির জন্যই জুলাইে আন্দোলন হয়েছে। আমাদের যা সংস্কার করার দরকার তা আমরা করব। নির্বাচন কমিশন যদি সঠিকভাবে কাজ করে তাহলে সংস্কার নিয়ে কাজ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। জনগণকে সজাগ থাকতে হবে এবং তাদেরকে সংস্কার বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। এবং দাবিগুলকে জনদাবিতে তৈরি করতে হবে।
মুনিরা খান বলেন, দুর্নীতি কমাতে হবে। আগে এনআইডি পেতে যে টাকা দিতে হত এখন তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হয়। দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ ধরে নিয়ে এগোনো উচিত। সমাজ, সরকার ও জীবনের সবস্তর থেকে দুর্নীতি বাদ দিতে হবে। এখানে নজর দিতে হবে।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের প্রশাসনে এখনো দালালি স্বভাব আছে। আমাদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা থাকতে হবে, এটি কেবল প্রশাসনের মধ্যেই থাকবে না। কেন্দ্রীভূতকরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা যাবে না। সংস্কার করে তারপর নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে জানাতে হবে যেন তারা এ পরিবর্তনগুলো তাদের নির্বাচন ইস্তেহারে থাকে। এবং এ সংস্কারগুলো জনগণকেও জানাতে হবে।