Dhaka ০১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ ॥ ২৯ স্টেশনের মধ্যে মাস্টার নেই ২১টিতে, টিকিট বিক্রি হয়না ১৫টিতে ॥ ব্যাহত রেলসেবা॥ সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৪১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০
  • / ১৭৪৭ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ লোকবলের তীব্র সংকট বিরাজ করছে রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে। স্টেশন মাস্টার, টিটিইসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অর্ধেক লোকবলও নেই। এতে একদিকে যেমন রেলের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রেলপথের বেশিরভাগ স্টেশনে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এ রেলপথের ২৯টি স্টেশনের মধ্যে মাস্টার নেই ২১টি স্টেশনে আর টিকিট বিক্রি হয়না ১৫টি স্টেশনে। রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র চারজন।
ফলে যাত্রীরা স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে না ওঠায় এবং ট্রেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক টিটিই না থাকায় বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে অনেকেই। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজবাড়ীÑভাঙ্গা রুটে রাজবাড়ী এক্সপ্রেস নামে একটি মেইল ট্রেন দিনে চারবার এবং রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে একই ট্রেন নাম পাল্টে ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস নামে দিনে দুবার চলাচল করে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রেলপথে রয়েছে মোট ১৭টি স্টেশন। এগুলো হলো রাজবাড়ী, সূর্যনগর, বেলগাছি, কালুখালী জংশন, রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, নলিয়া বাজার, মধুখালী, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সসরাইল, বনমালিপুর, বেসপুর, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াপাড়া। এগুলোর মধ্যে রাজবাড়ী, কালুখালী, মধুখালী, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াড়া এ পাঁচটি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার রয়েছে। বাকী ১২টি স্টেশনে মাস্টার নেই। আর টিকিট বিক্রি হয় রাজবাড়ী, কালুখালী, বহরপুর, মধুখালী, বোয়ালমারী, বনমালিপুর, ব্যাসপুর, কাশিয়ানী এ আটটি স্টেশনে। টিকিট বিক্রি হয়না নয়টি স্টেশনে।
রাজবাড়ীÑভাঙ্গা রেলপথে রয়েছে ১৩টি স্টেশন। এগুলো হলো রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া জংশন, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর, ফরিদপুর কলেজ, বাখুন্দা, তালমা, পুখুরিয়া ও ভাঙ্গা। এর মধ্যে অম্বিকাপুর ও ফরিদপুর কলেজ স্টেশনে ট্রেনই থামেনা। স্টেশন মাস্টার রয়েছে চারটি স্টেশনে। এগুলো হলো রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা। টিকিট বিক্রি হয় রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া, আমিরাবাদ, ফরিদপুর, বাখুন্দা, তালমা ও পুখুরিয়া স্টেশনে। টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই ছয় স্টেশনে।
রাজবাড়ীÑপোড়াদহ রেলপথে রয়েছে ১২টি স্টেশন। এ রুটে চলাচল করে তিনটি ট্রেন। এগুলো হলো গোয়ালন্দ ঘাটÑখুলনা নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস মেইল ট্রেন, গোয়ালন্দ ঘাটÑপোড়াদহ সাটল ট্রেন এবং গোয়ালন্দ ঘাটÑরাজশাহী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন। এর মধ্যে নকশীকাঁথা ও সাটল ট্রেন দুটি বেসরকারি খাতে দেয়া আছে। যেকারণে টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তবে এ রুটের বেশ কয়েকটি স্টেশনে মাস্টার নেই বলে জানা গেছে।
স্টেশন মাস্টার না থাকায় ট্রেন চলাচলে দারুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ট্রেন ক্রসিংয়ের সময় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। রাজবাড়ীÑপোড়াদহ রুটটিতে দিনে আটবার ট্রেন যাতায়াত করে। এসময়ের মধ্যে ট্রেন ক্রসিং দিতে হয় প্রায়ই। ১৫ মিনিটের স্থলে ট্রেনটিকে কখনও কখনও ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় ক্রসিংয়ের জন্য। এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে চারজন মাস্টার থাকার কথা। রয়েছে দুজন। তারা বিশ্রাম নেয়ারও সময় পান না। স্টেশনগুলোতে মাস্টার থাকলে ট্রেন ক্রসিং দিতে সুবিধা হতো। রাজবাড়ী থেকে কালুখালী ট্রেন যেতে লাগে ৩৫ মিনিট। কোনো ট্রেন ক্রসিং দিতে হলে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। ট্রেনটি যদি বেলগাছিতে ক্রসিং দেয়া যেত তাহলে সময় অনেক বেঁচে যেত। লোকোবলের সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
অপরদিকে স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠছেন। রাজবাড়ীÑফরিদপুর ও রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটের ট্রেনে থাকে মোট ছয়টি বগি। দায়িত্বরত টিটিই থাকেন মাত্র দুজন। এ দুজনের পক্ষে ছয়টি বগি কভার করা দুঃসাধ্য। সুযোগ সন্ধানী যাত্রীরা এ সুযোগটিও নিয়ে থাকে। যেসব যাত্রী টিকিট করার সুযোগ পাননা ট্রেনের ভেতরে টিটিই সামনে এলে তারা টিটিই’র কাছ থেকে কাগজের ইএফটি টিকিট নেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ের জুনিয়র ইন্সপেক্টর টিটিইজ (জিআরআই) মোকলেসুর রহমান সাগর জানান, রাজবাড়ী সেকশনে ছয়জন টিটিইর পদ মঞ্জুরি রয়েছে। কিন্তু ছয়জনও পর্যাপ্ত নয়। সেখানে টিটিই আছে চারজন। এদের মধ্যে দুজনকে গোয়ালন্দ ঘাটÑরাজশাহী রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর মধুমতি ট্রেনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। বাকী দুজনকে ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনে বগি থাকে ছয়টি। দুজনের পক্ষে ছয়টি বগি কভার করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তার উপর বেশির ভাগ স্টেশনে বিক্রি হয়না টিকিট। ট্রেনের ভেতরে টিকিট না করা যাত্রীদের ইএফটি (একসেস ফেয়ার টিকিট) দিতে হচ্ছে। একটা ইএফটি টিকিট লিখতে বেশ সময় ব্যয় হয়। যে কারণে চার পাঁচজন যাত্রী মিলে একটি টিকিট করা হয়। প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার টাকার ইএফটি টিকিট বিক্রি করা হয়। টিটিটিই সংখ্যা বাড়ানো হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তো। টিটিই সংকট দূর করার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালিউল হক বলেন, লোকোবল সংকট রেলের জন্য একটা সমস্যাই। লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট থেকে যারা অবসরে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন তাদেরকে ফেরত এনে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাসুদ সারোয়ার বলেন, রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা রুটের স্টেশনগুলোতে লোকবল সংকট দূর করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানে টিকিট বিক্রি খুবই জরুরী সেখানে যে কোনো উপায়ে আমরা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। টিটিই সংকটের বিষয়ে বলেন, টিটিই তৈরির যে প্রক্রিয়া তা হলো প্রথমে টিসি নিয়োগ দেয়া হয়। তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে টিটিই করা হয়ে থাকে। কিন্তু টিসি নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। টিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সরকার লোকবল সংকট দূর করার ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। রেলমন্ত্রী নিজেও খুব দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা অগ্রসরও হচ্ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের রেলের নিয়োগ বিধি ১৯৮৫ অনুসারে যে নিয়োগ দেয়া হতো হাইকোর্টে একটি আদেশে তা স্থগিত করেছেন। একারণে রেল মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারছেনা। এটার সমাধান হয়ে গেলেই আমাদের যে সার্কুলার দেয়া আছে তার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও টিকিট না দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে কর্তব্যরত টিটিই সংখ্যা কম থাকায় এবং যাত্রী বেশি হওয়ায় ইএফটি টিকিট চারজন যাত্রীর জন্য একটি টিকিট করার কথা বলা আছে। জনে জনে টিকিট করতে সময় বেশি লাগায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে টিকিটের টাকা নিয়ে টিকিট এন্ট্রি না করলে জানামাত্রই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ ॥ ২৯ স্টেশনের মধ্যে মাস্টার নেই ২১টিতে, টিকিট বিক্রি হয়না ১৫টিতে ॥ ব্যাহত রেলসেবা॥ সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

প্রকাশের সময় : ০৯:৪১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মার্চ ২০২০

জনতার আদালত অনলাইন ॥ লোকবলের তীব্র সংকট বিরাজ করছে রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে। স্টেশন মাস্টার, টিটিইসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অর্ধেক লোকবলও নেই। এতে একদিকে যেমন রেলের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রেলপথের বেশিরভাগ স্টেশনে টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এ রেলপথের ২৯টি স্টেশনের মধ্যে মাস্টার নেই ২১টি স্টেশনে আর টিকিট বিক্রি হয়না ১৫টি স্টেশনে। রাজবাড়ী রেলওয়ে সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র চারজন।
ফলে যাত্রীরা স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে না ওঠায় এবং ট্রেনে পর্যাপ্ত সংখ্যক টিটিই না থাকায় বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে অনেকেই। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রাজবাড়ীÑভাঙ্গা রুটে রাজবাড়ী এক্সপ্রেস নামে একটি মেইল ট্রেন দিনে চারবার এবং রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে একই ট্রেন নাম পাল্টে ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস নামে দিনে দুবার চলাচল করে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রেলপথে রয়েছে মোট ১৭টি স্টেশন। এগুলো হলো রাজবাড়ী, সূর্যনগর, বেলগাছি, কালুখালী জংশন, রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, নলিয়া বাজার, মধুখালী, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সসরাইল, বনমালিপুর, বেসপুর, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াপাড়া। এগুলোর মধ্যে রাজবাড়ী, কালুখালী, মধুখালী, কাশিয়ানী ও ভাটিয়াড়া এ পাঁচটি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার রয়েছে। বাকী ১২টি স্টেশনে মাস্টার নেই। আর টিকিট বিক্রি হয় রাজবাড়ী, কালুখালী, বহরপুর, মধুখালী, বোয়ালমারী, বনমালিপুর, ব্যাসপুর, কাশিয়ানী এ আটটি স্টেশনে। টিকিট বিক্রি হয়না নয়টি স্টেশনে।
রাজবাড়ীÑভাঙ্গা রেলপথে রয়েছে ১৩টি স্টেশন। এগুলো হলো রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া জংশন, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর, ফরিদপুর কলেজ, বাখুন্দা, তালমা, পুখুরিয়া ও ভাঙ্গা। এর মধ্যে অম্বিকাপুর ও ফরিদপুর কলেজ স্টেশনে ট্রেনই থামেনা। স্টেশন মাস্টার রয়েছে চারটি স্টেশনে। এগুলো হলো রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা। টিকিট বিক্রি হয় রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া, আমিরাবাদ, ফরিদপুর, বাখুন্দা, তালমা ও পুখুরিয়া স্টেশনে। টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই ছয় স্টেশনে।
রাজবাড়ীÑপোড়াদহ রেলপথে রয়েছে ১২টি স্টেশন। এ রুটে চলাচল করে তিনটি ট্রেন। এগুলো হলো গোয়ালন্দ ঘাটÑখুলনা নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস মেইল ট্রেন, গোয়ালন্দ ঘাটÑপোড়াদহ সাটল ট্রেন এবং গোয়ালন্দ ঘাটÑরাজশাহী আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন। এর মধ্যে নকশীকাঁথা ও সাটল ট্রেন দুটি বেসরকারি খাতে দেয়া আছে। যেকারণে টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তবে এ রুটের বেশ কয়েকটি স্টেশনে মাস্টার নেই বলে জানা গেছে।
স্টেশন মাস্টার না থাকায় ট্রেন চলাচলে দারুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ট্রেন ক্রসিংয়ের সময় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। রাজবাড়ীÑপোড়াদহ রুটটিতে দিনে আটবার ট্রেন যাতায়াত করে। এসময়ের মধ্যে ট্রেন ক্রসিং দিতে হয় প্রায়ই। ১৫ মিনিটের স্থলে ট্রেনটিকে কখনও কখনও ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় ক্রসিংয়ের জন্য। এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার শিমুল কুমার বিশ্বাস বলেন, রাজবাড়ী রেলস্টেশনে চারজন মাস্টার থাকার কথা। রয়েছে দুজন। তারা বিশ্রাম নেয়ারও সময় পান না। স্টেশনগুলোতে মাস্টার থাকলে ট্রেন ক্রসিং দিতে সুবিধা হতো। রাজবাড়ী থেকে কালুখালী ট্রেন যেতে লাগে ৩৫ মিনিট। কোনো ট্রেন ক্রসিং দিতে হলে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। ট্রেনটি যদি বেলগাছিতে ক্রসিং দেয়া যেত তাহলে সময় অনেক বেঁচে যেত। লোকোবলের সংকটের কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
অপরদিকে স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা টিকিট না কেটেই ট্রেনে উঠছেন। রাজবাড়ীÑফরিদপুর ও রাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটের ট্রেনে থাকে মোট ছয়টি বগি। দায়িত্বরত টিটিই থাকেন মাত্র দুজন। এ দুজনের পক্ষে ছয়টি বগি কভার করা দুঃসাধ্য। সুযোগ সন্ধানী যাত্রীরা এ সুযোগটিও নিয়ে থাকে। যেসব যাত্রী টিকিট করার সুযোগ পাননা ট্রেনের ভেতরে টিটিই সামনে এলে তারা টিটিই’র কাছ থেকে কাগজের ইএফটি টিকিট নেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ের জুনিয়র ইন্সপেক্টর টিটিইজ (জিআরআই) মোকলেসুর রহমান সাগর জানান, রাজবাড়ী সেকশনে ছয়জন টিটিইর পদ মঞ্জুরি রয়েছে। কিন্তু ছয়জনও পর্যাপ্ত নয়। সেখানে টিটিই আছে চারজন। এদের মধ্যে দুজনকে গোয়ালন্দ ঘাটÑরাজশাহী রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর মধুমতি ট্রেনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। বাকী দুজনকে ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনে বগি থাকে ছয়টি। দুজনের পক্ষে ছয়টি বগি কভার করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। তার উপর বেশির ভাগ স্টেশনে বিক্রি হয়না টিকিট। ট্রেনের ভেতরে টিকিট না করা যাত্রীদের ইএফটি (একসেস ফেয়ার টিকিট) দিতে হচ্ছে। একটা ইএফটি টিকিট লিখতে বেশ সময় ব্যয় হয়। যে কারণে চার পাঁচজন যাত্রী মিলে একটি টিকিট করা হয়। প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার টাকার ইএফটি টিকিট বিক্রি করা হয়। টিটিটিই সংখ্যা বাড়ানো হলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তো। টিটিই সংকট দূর করার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালিউল হক বলেন, লোকোবল সংকট রেলের জন্য একটা সমস্যাই। লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে। ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট থেকে যারা অবসরে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন তাদেরকে ফেরত এনে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাসুদ সারোয়ার বলেন, রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা রুটের স্টেশনগুলোতে লোকবল সংকট দূর করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেখানে টিকিট বিক্রি খুবই জরুরী সেখানে যে কোনো উপায়ে আমরা টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। টিটিই সংকটের বিষয়ে বলেন, টিটিই তৈরির যে প্রক্রিয়া তা হলো প্রথমে টিসি নিয়োগ দেয়া হয়। তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে টিটিই করা হয়ে থাকে। কিন্তু টিসি নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। টিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সরকার লোকবল সংকট দূর করার ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিয়েছে। রেলমন্ত্রী নিজেও খুব দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আমরা অগ্রসরও হচ্ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের রেলের নিয়োগ বিধি ১৯৮৫ অনুসারে যে নিয়োগ দেয়া হতো হাইকোর্টে একটি আদেশে তা স্থগিত করেছেন। একারণে রেল মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারছেনা। এটার সমাধান হয়ে গেলেই আমাদের যে সার্কুলার দেয়া আছে তার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও টিকিট না দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ভাঙ্গাÑরাজবাড়ীÑভাটিয়াপাড়া রুটে কর্তব্যরত টিটিই সংখ্যা কম থাকায় এবং যাত্রী বেশি হওয়ায় ইএফটি টিকিট চারজন যাত্রীর জন্য একটি টিকিট করার কথা বলা আছে। জনে জনে টিকিট করতে সময় বেশি লাগায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে টিকিটের টাকা নিয়ে টিকিট এন্ট্রি না করলে জানামাত্রই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।