অমর কথাসাহিত্য বিষাদসিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মদিন আজ ॥ বালিয়াকান্দির পদমদীতে পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি
- প্রকাশের সময় : ১২:৩০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯
- / ১৭৭৪ জন সংবাদটি পড়েছেন
সৌমিত্র শীল ॥ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কালজয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের ১৭২ তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৩ নভেম্বর। জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পদমদীতে তার সমাধিস্থলে দুই দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পদমদীর স্মৃতিকেন্দ্রটিকে পর্যটন কেন্দ্র এবং একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় করার করার দাবি বহুদিনের। পদমদীতেই মীর মশাররফ হোসেনের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মীরের স্ত্রী বিবি কুলসুম, ভাই মীর মোকাররম হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী বিবি খোদেজা বেগম।
মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা লাহিনীপাড়া গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। পরে সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। মীর মশাররফ হোসেন গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, প্রবন্ধ ও ধর্ম বিষয়ক ৩৭টি বই রচনা করেছেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি কিছু দিন তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন। তার স্মৃতিকে জাগ্রত করতে ২০০০ সালের দিকে পদমদীতে একটি স্মৃতি কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল তারিখে স্মৃতি কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্মৃতিকেন্দ্রে মীরের একটি আবক্ষ মূর্র্তি, সংগ্রহশালা, সভাকক্ষ, গ্রন্থাগার, পাঠাগার, অভ্যর্থনা কক্ষ, ভিআইপি রুম রয়েছে। গ্রন্থগারে মীর মশাররফ হোসেনের লেখা উপন্যাস বিষাদ সিন্ধুর ইংরেজী ও বাংলায় লেখা বই সংরক্ষিত আছে। এছাড়া তার রচনা সমগ্রের মধ্যে রতœাবতী, গৌরি সেতু, বসন্ত কুমারী, জমিদার দর্পণ, সঙ্গীত লহরী, উদাসীন পথিকের মনের কথা, মদিনার গৌরব, বিষাদ সিন্ধু, গো-জীবন, বেহুলা গীতাভিনয়, গাজী মিয়ার বোস্তানী, মৌলুদ শরীফ, মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা, বিবি খোদেজার বিবাহ, হজরত ওমরের ধর্মজীবন লাভ, হজরত বেলালের জীবনী, হজরত আমীর হামজার ধর্মজীবন লাভ, মোসলেম বীরত্ব, এসলামের জয়, আমার জীবনী, বাজিমাত, হজরত ইউসোফ, খোতবা বা ঈদুল ফিতর, বিবি কুলসুম, ভাই ভাই এইতো চাই, ফাস কাগজ, একি, টালা অভিনয়, পঞ্চনারী, প্রেম পারিজাত, বাঁধাখাতা, নিয়তি কি অবনতি, তহমিনা, গাজী মিয়ার গুলি ও বৃহৎ হীরক খনি ইত্যাদি বই রয়েছে গ্রন্থাগারে। তবে স্মৃতি কেন্দ্রের সংগ্রহশালায় নেই তেমন কিছুই। কয়েকটি আঁকা ছবি আর ফেস্টুন রাখা হয়েছে সেখানে। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রটিতে বর্তমানে একজন প্রোগ্রাম অফিসার, দুই জন অফিস সহকারী, একজন অফিস সহায়ক ও দুইজন নিরাপত্তা কর্মীর পদায়ন রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম অফিসার পদটির দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় বাংলা একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
কেন্দ্রের অফিস সহায়ক জিয়াউল হক জানান, স্মৃতি কেন্দ্রের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা বদলেছে। এখন পর্যটকরা আসে। তবে থাকা খাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা সমস্যায় পড়েন। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। যতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে পর্যটকরা আসতো বলে জানান তিনি। এমনিতে গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন পর্যটক আসেন।
বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি বিনয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই স্মৃতিকেন্দ্রটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র করার জোর দাবি জানিয়ে আসছি। কেন্দ্রে যাতে একজন সহকারী পরিচালককে স্থায়ীভাবে থাকেন সে ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি। বর্তমান যিনি প্রোগ্রাম অফিসার তিনি কখনও থাকেন কখনও থাকেন না। এছাড়া মীর মশাররফ হোসেনের যে জমি আছে তাতে সেখানে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় করারও দাবি জানিয়ে আসছি বহুদিন ধরে।
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়সাল আহদে জানান, মীর মশাররফ হোসেনের ১৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী দুই দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও একক গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি আমারও। আমি এ দাবির সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।