Dhaka ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অচলাবস্থা ॥ জেলা প্রশাসকের ঘাট পরিদর্শন

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০১৯
  • / ১৬৫১ জন সংবাদটি পড়েছেন


জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মায় তীব্র স্রোত ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের ব্যাস্ততম নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়। এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পরে বন্ধ হয়ে গেছে দু’টি ফেরি ঘাট। বাকি চারটি ঘাটে ফেরি ভিড়তে বেগ পেতে হলেও কোনরকমে সেখান দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় লঞ্চ পারাপার যাত্রীদের ফেরিতে নদী পারাপার হতে বলা হচ্ছে। এ সময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় লঞ্চ চলাচল ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্রোত কমলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু করানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাট ও ২ নম্বর ফেরিঘাটে মাঝে থাকা সিদ্দিক ব্যপারীর পাড়া গ্রামের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতেকরে অন্তত ২০০ পরিবার তাদের বসতভিটা হারানোসহ বন্ধ হয়ে গেছে ওই দুইটি ফেরি ঘাট।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে থাকা ছয়টি ঘাটের মধ্যে ভাঙ্গনের কবলে পরে ১ নম্বর ও ২ নম্বর ফেরি ঘাট সম্পন্ন বন্ধ হয়ে গেছে। ৪ নম্বর ফেরি ঘাটটি সচল থাকলেও তীব্র ¯্রােতের কারণে সেখানে ফেরি ভিরতে পারছে না। বাকি ৩ নম্বর, ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। তবে এ সকল ঘাটেও ফেরি ভিরতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে এবং অনেক সময় লাগছে। সুত্র আরো জানায়, এই নৌরুটে চলাচলের জন্য ১৬ টি ফেরি থাকলেও ১৩ টি ফেরি সচল রয়েছে। সচল থাকা ফেরিগুলোর মধ্যে রোরো (বড়) ৫ টি ফেরি সার্বক্ষনিক চলাচল করতে পারছে। বাকি ৮ টি ফেরি ¯্রােতের কারনে ঠিকমত চলতে পারছে না। এই ফেরিগুলো মাঝে মধ্যে দীর্ঘ চেষ্টা করে দু’একটি ট্রিপ দিচ্ছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের ২ নম্বর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একের পর এক বড় বড় মাটির চাপ ভেঙে পড়ছে নদীতে। উৎসুক শত শত মানুষ ভাঙ্গন দেখছে। এ সময় অনেকেই জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে এই এলাকার ভাঙন এতই তীব্র হয়েছে যা বলার মতো নয়। মুহুর্তের মধ্যে বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বালুর বস্তা ফেলছে তা তেমন কোন কাজেই আসছে না। পূর্বের স্থাপন করা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সবগুলো ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে চলে যাবে। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রিবাহি বাস পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে বসে আছে। এ সময় বাস চালকেরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে এখন যাত্রি নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে। তারপর পাওয়া যাচ্ছে ফেরি। আগের দিন রাতে অনেক নৈশকোচ দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পর দিন ফেরির নাগাল পাচ্ছে। এছাড়া গোয়ালন্দ ঘাট থেকে নয় কিলোমিটার পিছনে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার জামাই পালের মাজার পর্যন্ত পাচ কিলোমিটার এলাকায় সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়েছে পন্যবাহি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় সিরিয়ালে আটকে থাকা ট্রাক চালকেরা জানান, গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় যেখানে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে নেই কোন দোকান, হোটেল ও প্রসাব পায়খানার ব্যবস্থা। যে কারনে প্রচন্ড কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ছিনতাই ও ছিচকে চোরের উৎপাত রয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় কর্মরত (টিএসআই) মোঃ রেজাউল করিম জানান, ঘাটের এই অবস্থা দেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পন্যবাহি ট্রাকগুলোকে বিবল্প সড়ক হিসেবে সিরাজগঞ্জ সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও ট্রাক চালকেরা ওই রুট ব্যবহার করতে রাজি না। তারা তেল খরচ বাচানোর জন্য এখানেই বসে থাকছে।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, প্রবল ¯্রােত নদী ভাঙ্গন এইসব প্রাকৃতিক কারন। আমাদের যে ফেরি সচল আছে সেগুলো দিয়ে পার করা সম্ভব নয়। কারন নদীতে ¯্রােতের কারনে ছোট ফেরিগুলোকে টেনে কয়েক মাইল দুরে নিয়ে যাচ্ছে। বড় ফেরি ঘাটে আসতে সময় লাগছে ২ ঘন্টারও বেশি। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

তীব্র স্রোত ও ভাঙনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অচলাবস্থা ॥ জেলা প্রশাসকের ঘাট পরিদর্শন

প্রকাশের সময় : ০৭:২১:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মায় তীব্র স্রোত ও ভয়াবহ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের ব্যাস্ততম নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়। এরই মধ্যে ভাঙনের কবলে পরে বন্ধ হয়ে গেছে দু’টি ফেরি ঘাট। বাকি চারটি ঘাটে ফেরি ভিড়তে বেগ পেতে হলেও কোনরকমে সেখান দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাট পরিদর্শন শেষে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত দেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় লঞ্চ পারাপার যাত্রীদের ফেরিতে নদী পারাপার হতে বলা হচ্ছে। এ সময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় লঞ্চ চলাচল ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় লঞ্চ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্রোত কমলে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু করানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার দৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাট ও ২ নম্বর ফেরিঘাটে মাঝে থাকা সিদ্দিক ব্যপারীর পাড়া গ্রামের বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতেকরে অন্তত ২০০ পরিবার তাদের বসতভিটা হারানোসহ বন্ধ হয়ে গেছে ওই দুইটি ফেরি ঘাট।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, নদীর দৌলতদিয়া প্রান্তে থাকা ছয়টি ঘাটের মধ্যে ভাঙ্গনের কবলে পরে ১ নম্বর ও ২ নম্বর ফেরি ঘাট সম্পন্ন বন্ধ হয়ে গেছে। ৪ নম্বর ফেরি ঘাটটি সচল থাকলেও তীব্র ¯্রােতের কারণে সেখানে ফেরি ভিরতে পারছে না। বাকি ৩ নম্বর, ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। তবে এ সকল ঘাটেও ফেরি ভিরতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে এবং অনেক সময় লাগছে। সুত্র আরো জানায়, এই নৌরুটে চলাচলের জন্য ১৬ টি ফেরি থাকলেও ১৩ টি ফেরি সচল রয়েছে। সচল থাকা ফেরিগুলোর মধ্যে রোরো (বড়) ৫ টি ফেরি সার্বক্ষনিক চলাচল করতে পারছে। বাকি ৮ টি ফেরি ¯্রােতের কারনে ঠিকমত চলতে পারছে না। এই ফেরিগুলো মাঝে মধ্যে দীর্ঘ চেষ্টা করে দু’একটি ট্রিপ দিচ্ছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের ২ নম্বর ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একের পর এক বড় বড় মাটির চাপ ভেঙে পড়ছে নদীতে। উৎসুক শত শত মানুষ ভাঙ্গন দেখছে। এ সময় অনেকেই জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির সাথে এই এলাকার ভাঙন এতই তীব্র হয়েছে যা বলার মতো নয়। মুহুর্তের মধ্যে বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে বালুর বস্তা ফেলছে তা তেমন কোন কাজেই আসছে না। পূর্বের স্থাপন করা বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের সবগুলো ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে চলে যাবে। এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় যাত্রিবাহি বাস পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে বসে আছে। এ সময় বাস চালকেরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে এখন যাত্রি নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে। তারপর পাওয়া যাচ্ছে ফেরি। আগের দিন রাতে অনেক নৈশকোচ দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পর দিন ফেরির নাগাল পাচ্ছে। এছাড়া গোয়ালন্দ ঘাট থেকে নয় কিলোমিটার পিছনে গোয়ালন্দ মোড় থেকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার জামাই পালের মাজার পর্যন্ত পাচ কিলোমিটার এলাকায় সিরিয়ালে আটকে রাখা হয়েছে পন্যবাহি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় সিরিয়ালে আটকে থাকা ট্রাক চালকেরা জানান, গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় যেখানে আটকে রাখা হয়েছে, সেখানে নেই কোন দোকান, হোটেল ও প্রসাব পায়খানার ব্যবস্থা। যে কারনে প্রচন্ড কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ছিনতাই ও ছিচকে চোরের উৎপাত রয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় কর্মরত (টিএসআই) মোঃ রেজাউল করিম জানান, ঘাটের এই অবস্থা দেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পন্যবাহি ট্রাকগুলোকে বিবল্প সড়ক হিসেবে সিরাজগঞ্জ সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও ট্রাক চালকেরা ওই রুট ব্যবহার করতে রাজি না। তারা তেল খরচ বাচানোর জন্য এখানেই বসে থাকছে।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, প্রবল ¯্রােত নদী ভাঙ্গন এইসব প্রাকৃতিক কারন। আমাদের যে ফেরি সচল আছে সেগুলো দিয়ে পার করা সম্ভব নয়। কারন নদীতে ¯্রােতের কারনে ছোট ফেরিগুলোকে টেনে কয়েক মাইল দুরে নিয়ে যাচ্ছে। বড় ফেরি ঘাটে আসতে সময় লাগছে ২ ঘন্টারও বেশি। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।