Dhaka ০২:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সাধন গোস্বামী ॥ পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকুও

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০২:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৯
  • / ১৩৬০ জন সংবাদটি পড়েছেন


জনতার আদালত অনলাইন ॥ অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন সাধন গোস্বামী(৭৫)। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও পাননি স্বীকৃতি। বছরের পর বছর ঘুরেও মেলাতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধার একটি সনদ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছির বাসিন্দা সাধন গোস্বামী চিরকুমার ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার প্রতিবেশিরা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে জানালেও স্থানীয় প্রশাসন বা মুক্তিযোদ্ধারা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকার করেননি।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুক্তিযোদ্ধা অলিক কুমার গুপ্ত বীর প্রতীক এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাধন গোস্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ভারতের কল্যাণী ক্যাম্পে সাধন ট্রেনিং নিয়েছেন। তার সাথে যারা ব্যারাকে ছিল তারাও আমাকে জানিয়েছে সাধন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কিছুটা আত্মভোলা ধরনের সাধন মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগার করতে পারেনি। ২০১৬/১৭ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হচ্ছিল তখন আমি তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য সার্টিফাই করেছিলাম। স্থানীয় সাংসদ জিল্লুল হাকিমকেও বলেছিলাম। সাধন অনেক ঘুরাঘুরি করেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাধন গোস্বামীর নিজের কোনো জমিজমা ছিলনা। বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে লজিং থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে তিনি রেলস্টেশনে রাত্রি যাপন করতেন। সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন তাকে বেলগাছি মন্দিরের পাশে একটি খুপড়ি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সম্প্রতি হারিয়েছিলেন চলাফেরার ক্ষমতাও। তার নিকটাত্মীয় কেউ না থাকায় তাকে দেখাশোনা করার কেউ ছিলনা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই খুপড়ি ঘরেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী তাকে অচেতন অবস্থায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বেলগাছি এলাকার বাসিন্দা ডা. অপূর্ব কুমার সাহা জানান, মৃত্যুর পরও কেউ তার খোঁজ নেয়নি। মুক্তিযোদ্ধা বা প্রশাসনের কেউ তাকে সম্মান জানাতে আসেনি। রাজবাড়ী শহরের হিন্দু নেতৃবৃন্দের সহায়তায় তাকে রাজবাড়ী পৌর মহাশ্মশানে শেষকৃত্য করা হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জলিল বলেন, এলাকার লোকজন বলছে সাধন গোস্বামী মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তা সঠিক নয়। তার কোনো সনদ বা গেজেটে নাম নেই।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, জনশ্রুতি আছে সাধন গোস্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। এলাকাবাসীও তাই বলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তার কোনো নাম নেই। কালুখালী উপজেলায় খবর নিয়েছিলাম, সেখানেও নাম নেই। তাই রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সাধন গোস্বামী ॥ পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকুও

প্রকাশের সময় : ০৯:০২:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলেন সাধন গোস্বামী(৭৫)। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও পাননি স্বীকৃতি। বছরের পর বছর ঘুরেও মেলাতে পারেননি মুক্তিযোদ্ধার একটি সনদ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বেলগাছির বাসিন্দা সাধন গোস্বামী চিরকুমার ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার প্রতিবেশিরা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে জানালেও স্থানীয় প্রশাসন বা মুক্তিযোদ্ধারা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকার করেননি।
এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মুক্তিযোদ্ধা অলিক কুমার গুপ্ত বীর প্রতীক এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাধন গোস্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ভারতের কল্যাণী ক্যাম্পে সাধন ট্রেনিং নিয়েছেন। তার সাথে যারা ব্যারাকে ছিল তারাও আমাকে জানিয়েছে সাধন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কিছুটা আত্মভোলা ধরনের সাধন মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগার করতে পারেনি। ২০১৬/১৭ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হচ্ছিল তখন আমি তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য সার্টিফাই করেছিলাম। স্থানীয় সাংসদ জিল্লুল হাকিমকেও বলেছিলাম। সাধন অনেক ঘুরাঘুরি করেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাধন গোস্বামীর নিজের কোনো জমিজমা ছিলনা। বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে লজিং থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে তিনি রেলস্টেশনে রাত্রি যাপন করতেন। সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন তাকে বেলগাছি মন্দিরের পাশে একটি খুপড়ি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সম্প্রতি হারিয়েছিলেন চলাফেরার ক্ষমতাও। তার নিকটাত্মীয় কেউ না থাকায় তাকে দেখাশোনা করার কেউ ছিলনা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই খুপড়ি ঘরেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী তাকে অচেতন অবস্থায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বেলগাছি এলাকার বাসিন্দা ডা. অপূর্ব কুমার সাহা জানান, মৃত্যুর পরও কেউ তার খোঁজ নেয়নি। মুক্তিযোদ্ধা বা প্রশাসনের কেউ তাকে সম্মান জানাতে আসেনি। রাজবাড়ী শহরের হিন্দু নেতৃবৃন্দের সহায়তায় তাকে রাজবাড়ী পৌর মহাশ্মশানে শেষকৃত্য করা হয়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জলিল বলেন, এলাকার লোকজন বলছে সাধন গোস্বামী মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তা সঠিক নয়। তার কোনো সনদ বা গেজেটে নাম নেই।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, জনশ্রুতি আছে সাধন গোস্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। এলাকাবাসীও তাই বলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তার কোনো নাম নেই। কালুখালী উপজেলায় খবর নিয়েছিলাম, সেখানেও নাম নেই। তাই রাষ্ট্রীয় সম্মানের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।