রাজবাড়ী ফুরসাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে মাদুর বিছিয়ে চলে পাঠদান
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯
- / ১৬৮২ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ ছুটির ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে কিচির মিচির শব্দে হৈ হুল্লোড় করে বাড়ি ফেরার আনন্দ নেই। নেই কোনো শ্রেণি কক্ষ। স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে পাঠদান করা হয় শিক্ষার্থীদের। প্রায় এক মাস ধরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ফুরসাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে এ অবস্থা। পদ্মা নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর স্কুলঘরটির চারপাশ জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষক শিক্ষিকারা আর সেখানে ক্লাস করাতে চাননি।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ফুরসাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পদ্মা নদীর ওপারে বেতকা রাখালগাছি এলাকায় ছিল স্কুলটি। ২০০৩ সালে নদী ভাঙনে জমিজমা বসত ঘরের সাথে স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর এক বছর পর ২০০৪ সালে পদ্মার এপারে বরাট ইউনিয়নের কাশিমনগর গ্রামে আমিনুল হক নামে এক ব্যক্তির জমি কিনে বিদ্যালয়টি পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই সময় বিদ্যালয়ের ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াইশ জন। বেশ ভালই চলছিল বিদ্যালয়টি। কয়েক বছর আগে এখানেও শুরু হয় নদী ভাঙন। নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের খুব কাছে চলে আসে। বিলীন হয়ে যায় শত শত ঘরবাড়ি। বিদ্যালয়টির আশেপাশে আস্তে আস্তে জনমানব শূন্য হতে থাকে। ২০১৬ সাল থেকে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমতে কমতে এখন মাত্র সংখ্যা মাত্র ২৬ জন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক সহ চরজন শিক্ষক রয়েছেন। তবে বিদ্যালয়টির অবস্থান জনমানব শূন্য স্থানে এবং যাতায়াতে নিরাপত্তা হীনতার কারণে সেখানে পাঠদান করায় অনীহা প্রকাশ করে আসছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। যেকারণে আপাততঃ বরাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইউনুস আলীর বাড়িতে পাঠদান করানো হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনুস মেম্বারের বাড়ির বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষিকা তাসলিমা তামান্না ও জিয়াসমীন খাতুন। প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বসে আছেন একটি প্লাস্টিকের টুলের উপর। প্রতিদিন সকাল ৯টায় এভাবেই ক্লাস শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। ইউনুস মেম্বারের বাড়ি থেকে বিদ্যালয় ঘরটির অবস্থান প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। বিদ্যালয়ে যেতে হয় পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে। যেখানে দিনের বেলায় যেতেই ভয় লাগে।
ইউনুস মেম্বারের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, শিশুদের ভবিষ্যৎই তো লেখাপড়া। কোমলমতি শিশুদের কথা ভেবেই তার বাড়িতে পাঠদান করানোর অনুমতি দিয়েছেন। এতে তিনি খুশী। তবে বিদ্যালয়টির একটি সুব্যবস্থা করা হলে তিনি আরও খুশী হতেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আলমগীর কবির আরজু জানান, এখানে আগে অনেক বাড়ি ঘর ছিল। বিদ্যালয়ে ছাত্রÑছাত্রীর সংখ্যাও ছিল অনেক। নদী ভাঙন কবলিত মানুষ অন্যত্র চলে যায়। যেকারণে ছাত্রÑছাত্রী গেছে কমে। বিদ্যালয়টি জনমানব শূন্য অবস্থায় পড়ে যায়। এখান থেকে বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়টি রক্ষা না হলে তা এলাকারই ক্ষতি। এজন্য বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা তামান্না বলেন, বিদ্যালয়টি ফাঁকা মাঠের মধ্যে। আশে পাশে কোনো জনবসতি নেই। বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে হলে পাট খেতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এতে আমাদের এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে ভয় করতো। এখন আমরা ইউপি সদস্যের বাড়িতে পাঠদান করাই। এতে উভয়েরই সমস্যা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, আমি ১৯৯৯ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগ দেই। তখন বিদ্যালয়টি নদীর ওপারে ছিল। নদী ভাঙনে বিদ্যালয় ভবন বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ২০০৪ সালে এপারে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়। এখানেও নদী ভাঙনে বসত ঘর বিলীন হয়ে যায়। বিদালয়টি এখন ফাঁকা মাঠের মধ্যে। আশে পাশে ফসলি জমি। বড় বড় পাট খেত। যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাববোধ করি। গত তিন বছর ধরে তারা এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেছেন। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য উপযুক্ত জমি খুঁজতে বলেন। একজন ১৫ শতাংশ জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য যথেষ্ঠ নয়। বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ জমি প্রয়োজন। বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরা হলে তারা আপাততঃ কারও বাড়িতে পাঠদানের পরামর্শ দেন। গত ৮ জুন থেকে ইউনুস মেম্বারের বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করাচ্ছেন।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিমী বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য যথেষ্ঠ জায়গা পাওয়া যায়নি। এমতাস্থায় বিদ্যালয়টিকে কাছের একটি বিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করার জন্য চেষ্টা চলছে। মাস তিনেক আগে ডিজি অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও চিঠির জবাব আসেনি।