Dhaka ১১:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল না পাওয়ার শঙ্কা

ডেঙ্গুতে বিপদ বাড়ছে ভুল রিপোর্টে

ডেস্ক নিউজ
  • প্রকাশের সময় : ১০:০০:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১০২১ জন সংবাদটি পড়েছেন

 

চলতি বছর দেশজুড়ে ডেঙ্গুজ্বরের থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০৪ জন। এর মধ্যে গবেষণায় উঠে এসেছে ডেঙ্গু শনাক্তে বহুল প্রচলিত এনএস-১ পরীক্ষায় ৪৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল না পাওয়ার শঙ্কা। এতে দেখা গেছে, এ পদ্ধতিতে প্রতি চারজন রোগীর একজন ডেঙ্গু শনাক্তে ভুল তথ্য পাচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও পরীক্ষায় ফল আসছে নেগেটিভ।

গবেষণাটি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগ। গতকাল ইনস্টিটিউটে গবেষণার ফল প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কতগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো নমুনা পরীক্ষায় ভুল ফল আসা। এক্ষেত্রে একাধিক পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ডেঙ্গু শনাক্তে কোন পরীক্ষা বেশি কার্যকর সেটি বের করতে গত বছর ২০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন। ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ডেঙ্গু শনাক্তকরনে তিনটি ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতিতে কার্যকারিতা বিশ্লেষন করা হয়েছে। একটি এনএস-১ আইসিটি, আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা। ২০০টি নমুনার মধ্যে আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা ১২৪ পজেটিভ ও ৭৬ টি নেগেটিভ পাওয়া গেছে। একই নমুনার মধ্যে এনএস-১ আইসিটি পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৯৩ টি ও বাকীগুলো নেগেটিভ। আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা পদ্ধতিতে শতভাগ শনাক্ত করতে পেরেছে। নেগেটিভের ক্ষেত্রে তিন পদ্ধতিতেই ফল ছিল শতভাগ। এনএস-১ আইসিটি পরীক্ষায় সহজে ও অল্প সময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়। তবে এই পদ্ধতিতে সঠিক শনাক্তের হার ৫১ ভাগ। ফলে ৪৯ শতাংশ রোগীরই ভুল রিপোর্ট পাওয়ার শঙ্কা থাকে। এতে চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু পরীক্ষায় এনএস-১ পদ্ধতিতে কয়েকটি দেশের সংবেদনশীলতা সর্ম্পকে তথ্য উপস্থাপন করা হয় কর্মশালায়। সেখানে দেখা যায়, ব্রাজিলে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের, আরটিপিসিআর পদ্ধতির চেয়ে এনএস-১ এলিজা পরীক্ষার গুরুত্ব দেন। তারা জানান, ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা একটি সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্ত এ পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশি। এনএস-১ এলিজা পদ্ধতিতেও সঠিক ফল পাওয়া যায় কম খরচে। এছাড়া এটি প্রতিটি জেলা পর্যায়ে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন রোগীর ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলে এনএস-১ পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে সতর্কতা হিসাবে এনএস-১ এলিজা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেঙ্গু ফলস নেগেটিভ আসার কয়েকটি কারণ সর্ম্পকে তারা বলেন, কাগজে কলমে এনএস-১ পাঁচদিন পর্যন্ত শনাক্তের কথা বলা হলেও তিন দিনের পর শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইজিএম পরীক্ষার পরামর্শ দেন তারা। জানা যায়, ২০০ নমুনার মধ্যে ডেঙ্গুর ধরন ডেন-টু ৯৬ জন, ডেন-থ্রি ৩০ জন এবং ডেন-টু ও থ্রিতে আক্রান্ত ছিলেন ২ জন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুজ্বরের থাবায় মারা গেছেন সাতজন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৯ জন। এনিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ৫০৪ জন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৩ হাজার ৬৮৫ জন। গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৮ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছেন। চলতি বছরে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক আট শতাংশ নারী রয়েছেন। গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

৪৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল না পাওয়ার শঙ্কা

ডেঙ্গুতে বিপদ বাড়ছে ভুল রিপোর্টে

প্রকাশের সময় : ১০:০০:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

চলতি বছর দেশজুড়ে ডেঙ্গুজ্বরের থাবায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০৪ জন। এর মধ্যে গবেষণায় উঠে এসেছে ডেঙ্গু শনাক্তে বহুল প্রচলিত এনএস-১ পরীক্ষায় ৪৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল না পাওয়ার শঙ্কা। এতে দেখা গেছে, এ পদ্ধতিতে প্রতি চারজন রোগীর একজন ডেঙ্গু শনাক্তে ভুল তথ্য পাচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও পরীক্ষায় ফল আসছে নেগেটিভ।

গবেষণাটি করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগ। গতকাল ইনস্টিটিউটে গবেষণার ফল প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কতগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো নমুনা পরীক্ষায় ভুল ফল আসা। এক্ষেত্রে একাধিক পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ডেঙ্গু শনাক্তে কোন পরীক্ষা বেশি কার্যকর সেটি বের করতে গত বছর ২০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন। ভাইরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আরিফা আকরাম গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ডেঙ্গু শনাক্তকরনে তিনটি ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতিতে কার্যকারিতা বিশ্লেষন করা হয়েছে। একটি এনএস-১ আইসিটি, আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা। ২০০টি নমুনার মধ্যে আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা ১২৪ পজেটিভ ও ৭৬ টি নেগেটিভ পাওয়া গেছে। একই নমুনার মধ্যে এনএস-১ আইসিটি পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৯৩ টি ও বাকীগুলো নেগেটিভ। আরটিপিসিআর ও এনএস-১ এলিজা পদ্ধতিতে শতভাগ শনাক্ত করতে পেরেছে। নেগেটিভের ক্ষেত্রে তিন পদ্ধতিতেই ফল ছিল শতভাগ। এনএস-১ আইসিটি পরীক্ষায় সহজে ও অল্প সময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়। তবে এই পদ্ধতিতে সঠিক শনাক্তের হার ৫১ ভাগ। ফলে ৪৯ শতাংশ রোগীরই ভুল রিপোর্ট পাওয়ার শঙ্কা থাকে। এতে চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু পরীক্ষায় এনএস-১ পদ্ধতিতে কয়েকটি দেশের সংবেদনশীলতা সর্ম্পকে তথ্য উপস্থাপন করা হয় কর্মশালায়। সেখানে দেখা যায়, ব্রাজিলে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ৪০ দশমিক ২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের, আরটিপিসিআর পদ্ধতির চেয়ে এনএস-১ এলিজা পরীক্ষার গুরুত্ব দেন। তারা জানান, ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা একটি সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্ত এ পদ্ধতিতে খরচ অনেক বেশি। এনএস-১ এলিজা পদ্ধতিতেও সঠিক ফল পাওয়া যায় কম খরচে। এছাড়া এটি প্রতিটি জেলা পর্যায়ে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন রোগীর ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলে এনএস-১ পরীক্ষায় নেগেটিভ হলে সতর্কতা হিসাবে এনএস-১ এলিজা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেঙ্গু ফলস নেগেটিভ আসার কয়েকটি কারণ সর্ম্পকে তারা বলেন, কাগজে কলমে এনএস-১ পাঁচদিন পর্যন্ত শনাক্তের কথা বলা হলেও তিন দিনের পর শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইজিএম পরীক্ষার পরামর্শ দেন তারা। জানা যায়, ২০০ নমুনার মধ্যে ডেঙ্গুর ধরন ডেন-টু ৯৬ জন, ডেন-থ্রি ৩০ জন এবং ডেন-টু ও থ্রিতে আক্রান্ত ছিলেন ২ জন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুজ্বরের থাবায় মারা গেছেন সাতজন, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৯ জন। এনিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ৫০৪ জন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৩ হাজার ৬৮৫ জন। গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৮ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছেন। চলতি বছরে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ দশমিক দুই শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক আট শতাংশ নারী রয়েছেন। গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন