জীবন সংগ্রামী ঝুমু দাসের গল্প । । জীবীকার তাগিদে স্বামীর পেশা ধরে রেখে বিক্রি করছেন পত্রিকা
- প্রকাশের সময় : ০৯:৪৮:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
- / ১৯৪০ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ না, তিনি সাইকেল চালাতে জানতেন না। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ নয় মাস পায়ে হেঁেট হেঁেট রাজবাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পত্রিকা সরবরাহ করেছেন। কিছুদিন আগে অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে একটি সাইকেল কিনে চালানো শিখে এখন সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা বিক্রি করেন ঝুমু রানী দাস। বিয়ের পর যিনি রাজবাড়ী শহরে যাননি। তাকে আজ শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটতে হচ্ছে জীবন জীবীকার তাগিদে।
রাজবাড়ী পৌর এলাকার রেল কলোনীর বাসিন্দা পত্রিকা এজেন্ট মৃত জীবন দাসের স্ত্রী ঝুমু দাস ধরে রেখেছেন তার স্বামীর পেশাকেই। এ নিয়ে তার বিন্দুমাত্র জড়তা বা কোনো আক্ষেপ নেই। তার স্বামীর পেশাও ছিল পত্রিকা সরবরাহ।
ঝুমু রানী দাস জানান, ২০০২ সালের ৫ জুন জীবন দাসের সাথে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর জীবনকে নিয়ে সুখেই ছিলেন তিনি। তাদের সংসারে আছে ছেলে অরণ্য দাস। এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে।
২০১৭ সালে হঠাৎই জীবনের কিডনীর অসুখ ধরা পড়ে। স্বামীর কিডনীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সঞ্চিত সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়। চলতি বছর জানুয়ারিতে চিকিৎসার জন্য জীবনকে ঢাকায় নেয়া হয়। কিন্তু অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। জীবন অসুস্থ হওয়ার পর ছেলে অরণ্য কিছুদিন পত্রিকা সরবরাহ করতো। কিন্তু এতে তার পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটতো প্রচন্ডভাবে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকতে জীবনই তাকে এ পেশা ধরে রাখতে বলেছিল। নিরুপায় হয়ে অসুস্থ স্বামীকে ঢাকা হাসপাতালে এক নিকটাত্মীয়কে দেখাশোনার জন্য বলে রাজবাড়ী ফিরে আসেন ঝুমু। তুলে নেন গুরু দায়িত্ব। শুরু করেন পত্রিকা সরবরাহের কাজ। ছেলে অরণ্য তাকে গ্রাহক চিনিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। প্রথম দিকে মানুষ নানান কটূ কথা বলতো। কেউ কেউ প্রশংসাও করতো। তিনি কখনও কারো কটূকথায় কান দেননি। নিজের কাজ করে চলেছেন। চলতি বছর ২৫ জুন স্বামী জীবন দাস মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু থেমে থাকেননি ঝুমু দাস। ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে সাংসারিক কাজ শেষ করে ছেলের নাস্তার জন্য ভাত রাইস কুকারে চাপিয়ে সাড়ে পাঁচটার দিকে চলে যান পত্রিকা নামাতে। এরপর দিনভর চলে পত্রিকা সরবরাহ। রাজবাড়ী শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পায়ে হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এর মাঝে এক ফাঁকে করে নেন নাস্তা। দুপুরে বাড়ি গিয়ে আবারও সাংসারিক কাজ করতে হয়। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে আগস্ট মাসে কেনেন একটি সাইকেল। ছেলে অরণ্যর সাহায্যে রাতের বেলায় শিখতেন সাইকেল চালানো। সাইকেল চালানো শিখতে তার বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে। সাইকেল চালানো শেখার পর গত এক মাস ধরে তিনি সাইকেল চালিয়ে পত্রিকা সরবরাহ করছেন।
ঝুমু দাস বলেন, আমার জমি জিরেত সহায় সম্পত্তি বলে কিছু নেই। রেলের জমিতে থাকি। একমাত্র ছেলে অরণ্যই আমার সম্পদ। তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করাই এখন আমার স্বপ্ন। নিজের সাংসারিক কাজ ছাড়া কখনও কিছু করতে শিখিনি। বাজারেও যাইনি কখনও। জীবন জীবীকার তাগিদে আমি কাজ করে টাকা উপার্জন করছি। এতে কে কী বললো তাতে আমার কিছুই আসে যায়না। বরং পত্রিকা বিক্রির মত মহান কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত।