উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন তার
পা দিয়ে লিখে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছেন হাবিবুর
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
- / ১২০৩ জন সংবাদটি পড়েছেন
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই হাবিবুর রহমানের। হাত নেই বলে প্রথমে স্কুলেই ভর্তি নিতে চাননি শিক্ষকরা। সেই হাবিবুর এখন আলিম পরীক্ষার্থী। পাংশা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে দিচ্ছেন আলিম পরীক্ষা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন তার। হাবিবুর রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হেমায়েত খালী গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন বোনের একমাত্র ভাই হাবিবুর। তার বাবা আব্দুস সামাদ পেশায় কৃষক। জন্ম থেকে হাত নেই তার। তাই বলে দমে যাননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করতে করতে এক সময় সফল হন। ব্র্যাক স্কুলে তার শিক্ষার হাতেখড়ি। তারপর স্থানীয় হেমায়েতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়। এ মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। একই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় পাশ করেন২০১৮ সালে।
হাবিবুর রহমান জানান, ছোটবেলায় বোন ও বন্ধুদের লেখাপড়া দেখে তারও লেখাপড়া করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হাত নেই বলে লিখতে পারতেন না। নিজে নিজেই পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করতে থাকেন। এক সময় সফলও হন। বাবাকে বলেন স্কুলে ভর্তি করে দিতে। ছয় বছর বয়সে তাকে ব্র্যাকের স্কুলে নিয়ে যান তার বাবা। কিন্তু ব্র্যাকের শিক্ষকরা তার ভর্তি নিতে চাননি। শিক্ষকরা বলেন, ও তো লিখতে পারবে না। তখন তিনি তাদের বলেন আমি পা দিয়ে লিখতে পারি। শিক্ষকরা জানান, পা দিয়ে দাগ টেনে দেখাতে পারলে ভর্তি নেবেন। তিনি পা দিয়ে দাগ টেনে দেখানোর পর ভর্তি নেওয়া হয়। পা দিয়ে লেখা রপ্ত করতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দৈনন্দিন কাজ যেসব তা তার বাবা-মা করতে সহযোগিতা করেন। তিনি নিজেও করার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, আমার চেয়েও খারাপ অবস্থার মানুষ আছে। আল্লাহর কৃপায় আমিতো চলতে ফিরতে পারছি। অনেকে আছে চলতেও পারছে না। এনিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার বাবা-মা, বোন, চাচা, মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছে বলে আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই।
হাবিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন জানান, হাবিব জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই। তবে সে অত্যন্ত মেধাবী। অনেক প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাস রয়েছে তার। সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মো. হেদায়েতুল ইসলাম জানান, হাবিব তাদের মাদ্রাসার মেধাবী একজন ছাত্র। প্রতিটা ক্লাসেই ভালো ফল করেছে। সে তাদের গর্ব। তাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। তবে তার পরিবার দরিদ্র। কারো সসহযোগিতা পেলে বা তার পাশে কেউ দাঁড়ালে ভব্যিষ্যতে সে ভালো কিছু করতে পারবে।
পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সাইদ জানান, হাবিব ক্লাস ফাইভ থেকে তাদের মাদ্রাসায় পড়ছে। সে খুবই মেধাবী একজন ছাত্র। তার পড়াশোনার জন্য যতরকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া দরকার তারা দিচ্ছেন। বেতন মওকুফ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফি যদি দিতে পারে দেয় না দিতে পারলে তারা সেটা সমন্বয় করার চেষ্টা করেন। আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সে যাতে কখনই হীনমন্যতায় না ভোগে সেজন্য তার পাশে সব সময় আছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন।
পাংশা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আওয়াবুল্লাহ ইব্রাহিম বলেন, জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমান এই কেন্দ্র থেকেই জেএসসি এবং দাখিল পরীক্ষা দিয়েছিল। চলমান আলিম পরীক্ষাও দিচ্ছে। তার দুটো হাত না থাকলেও তার পায়ের লেখনি দেখে বোঝার উপায় নেই সে একজন প্রতিবন্ধী। সে অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান। হাবিবকে দেখে প্রতিবন্ধীদের শেখা উচিৎ। মানসিক শক্তি থাকলে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা হাবিব করে দেখিয়ে দিয়েছে। সে পরীক্ষায় ভালো করবে বলেই বিশ^াস করি। শিক্ষাজীবন শেষ করে সরকারের বদান্যতা পেলে সে ভালো চাকরীও পেতে পারে। যারা হাবিবকে সহযোগিতা করেছে তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি। সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তো সে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা তাকে বলেছিলাম; আলাদা কক্ষে পরীক্ষা দিতে। কিন্তু সে রাজী হয়নি। সাধারণ পরীক্ষার্থীদের সঙ্গেই সে পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধু তার জন্য ২০ মিনিট সময় অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।