Dhaka ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে ফের পদ্মার ভাঙনে বিলীন ৫০ মিটার এলাকা ॥ হুমকিতে ৩৫টি বসতঘর ও স্কুল

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ১৩৩২ জন সংবাদটি পড়েছেন

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মা নদীর পানি কমতেই ফের দেখা দিয়েছে ভাঙন। বুধবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের  চরসিলিমপুর গ্রামে পদ্মা নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন  আতঙ্কে রয়েছে  ৩৫টি  বসতঘর ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩৭৬ কোটি ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলার মাঝেই এনিয়ে ১১ দফা ভেঙেছে পদ্মার তীর।

রাজবাড়ী শহরতলীর  গোদারবাজারের অনতিদূরে চরসিলিমপুর গ্রাম। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পানি কমলেও নদীতে রয়েছে তীব্র ¯্রােত। পদ্মা নদীর  তীর সংরক্ষণ কাজের প্রায় ৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ভেঙে নদীতে বিলীন  হয়েছে। পাড়ে থাকা গাছপালাও চলে গেছে নদীতে। ভাঙন আতঙ্ক এলাকার মানুষের চোখে মুখে। যেন কান্নাই  এখন সম্বল তাদের। ভাঙন এলাকা থেকে ১০ গজ দূরে পদ্মার পাড়েই রয়েছে চরসিলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। করোনাকাল কাটিয়ে সদ্য পাঠদান শুরু হওয়া এই  বিদ্যালয়টি এখন ঝুঁকির মুখে।

বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকীর জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পর থেকে তারা আতঙ্কে আছেন। বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। টিনশেড ঘরটিতে এখন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা ৮০ বছর  বয়সী  বৃদ্ধা মহিরন বিবির চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। সাংবাদিক দেখে লাঠি ভর দিয়ে কাঁদতে  কাঁদতে ছুটে এসে বলেন, আমরা ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে কোথায় যাবো। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। রাতে ঘুমাতে পারিনা  ভয়ে।

নদীর পাড়েই বসতঘর মিজানপুর ইউপি মেম্বার আকবর হোসেনের। তার স্ত্রী খোদেজা বেগম জানান, বুধবার ভোর থেকে ভাঙন শুরু হয়। ঘুম ভেঙে তিনি দেখেন  বুদবুদ উঠছে। নদীর পাড়ের  ব্লকগুলো  ভেঙে চলে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে অনেকখানি এলাকা ভেঙে গেছে। তখনই তার স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা এসে কিছু বালুর বস্তা ফেলেছে। ভাঙনে নদীর পাড়ে থাকা অনেকগুলো গাছ চলে গেছে।  কয়েকটি গাছ কেটে ‘রক্ষা’ করতে পেরেছেন। এখন বসতঘর  নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ,  তাদের বাড়ির এপাড়ে নদী, ওপাড়েও নদী। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নদীর পাড় বাঁধার সময় আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু এখন আশা ভেঙে গেছে।

নদী পাড়ের অপর বাসিন্দা আলী আকবর জানান, এর আগে নদী ভাঙনে তাদের বসতঘরসহ দুই বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। এখানে এসেও নদী ভাঙনের শিকার হলেন। তার সহায় সম্বল সবই কেড়ে নিয়েছে নদী। এবার নদীতে বসতঘর ভাঙলে ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। উত্তরের বাতাস দেখলেই এখন ভয় করে। উত্তরের বাতাসে নদী ভাঙনের শঙ্কা থাকে বেশি।

রাজবাড়ী  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, পদ্মা তীর সংরক্ষণ কাজের ভাঙন বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ের  সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা দ্রুত সার্ভে করে জায়গাগুলো রিপেয়ার করে দেবো। পানি কমে  গেলেই এই কাজ শুরু হবে। এখন ব্লক ধসে গেছে। নদীর নিচের ম্যাটেরিয়াল অবস্থাটা ওপর থেকে বোঝা যায়না। আপাততঃ বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পানির মধ্যে বালুর বস্তা ফেলে খুব বেশি লাভ হয়না। পানি কমলেই সুন্দর করে রিপেয়ার করা হবে।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

রাজবাড়ীতে ফের পদ্মার ভাঙনে বিলীন ৫০ মিটার এলাকা ॥ হুমকিতে ৩৫টি বসতঘর ও স্কুল

প্রকাশের সময় : ১০:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

জনতার আদালত অনলাইন ॥ পদ্মা নদীর পানি কমতেই ফের দেখা দিয়েছে ভাঙন। বুধবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের  চরসিলিমপুর গ্রামে পদ্মা নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন  আতঙ্কে রয়েছে  ৩৫টি  বসতঘর ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩৭৬ কোটি ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলার মাঝেই এনিয়ে ১১ দফা ভেঙেছে পদ্মার তীর।

রাজবাড়ী শহরতলীর  গোদারবাজারের অনতিদূরে চরসিলিমপুর গ্রাম। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পানি কমলেও নদীতে রয়েছে তীব্র ¯্রােত। পদ্মা নদীর  তীর সংরক্ষণ কাজের প্রায় ৫০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ভেঙে নদীতে বিলীন  হয়েছে। পাড়ে থাকা গাছপালাও চলে গেছে নদীতে। ভাঙন আতঙ্ক এলাকার মানুষের চোখে মুখে। যেন কান্নাই  এখন সম্বল তাদের। ভাঙন এলাকা থেকে ১০ গজ দূরে পদ্মার পাড়েই রয়েছে চরসিলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। করোনাকাল কাটিয়ে সদ্য পাঠদান শুরু হওয়া এই  বিদ্যালয়টি এখন ঝুঁকির মুখে।

বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকীর জানান, ভাঙন শুরু হওয়ার পর থেকে তারা আতঙ্কে আছেন। বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। টিনশেড ঘরটিতে এখন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা ৮০ বছর  বয়সী  বৃদ্ধা মহিরন বিবির চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। সাংবাদিক দেখে লাঠি ভর দিয়ে কাঁদতে  কাঁদতে ছুটে এসে বলেন, আমরা ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে কোথায় যাবো। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। রাতে ঘুমাতে পারিনা  ভয়ে।

নদীর পাড়েই বসতঘর মিজানপুর ইউপি মেম্বার আকবর হোসেনের। তার স্ত্রী খোদেজা বেগম জানান, বুধবার ভোর থেকে ভাঙন শুরু হয়। ঘুম ভেঙে তিনি দেখেন  বুদবুদ উঠছে। নদীর পাড়ের  ব্লকগুলো  ভেঙে চলে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে অনেকখানি এলাকা ভেঙে গেছে। তখনই তার স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা এসে কিছু বালুর বস্তা ফেলেছে। ভাঙনে নদীর পাড়ে থাকা অনেকগুলো গাছ চলে গেছে।  কয়েকটি গাছ কেটে ‘রক্ষা’ করতে পেরেছেন। এখন বসতঘর  নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ,  তাদের বাড়ির এপাড়ে নদী, ওপাড়েও নদী। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নদীর পাড় বাঁধার সময় আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু এখন আশা ভেঙে গেছে।

নদী পাড়ের অপর বাসিন্দা আলী আকবর জানান, এর আগে নদী ভাঙনে তাদের বসতঘরসহ দুই বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। এখানে এসেও নদী ভাঙনের শিকার হলেন। তার সহায় সম্বল সবই কেড়ে নিয়েছে নদী। এবার নদীতে বসতঘর ভাঙলে ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। উত্তরের বাতাস দেখলেই এখন ভয় করে। উত্তরের বাতাসে নদী ভাঙনের শঙ্কা থাকে বেশি।

রাজবাড়ী  পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, পদ্মা তীর সংরক্ষণ কাজের ভাঙন বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ের  সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা দ্রুত সার্ভে করে জায়গাগুলো রিপেয়ার করে দেবো। পানি কমে  গেলেই এই কাজ শুরু হবে। এখন ব্লক ধসে গেছে। নদীর নিচের ম্যাটেরিয়াল অবস্থাটা ওপর থেকে বোঝা যায়না। আপাততঃ বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পানির মধ্যে বালুর বস্তা ফেলে খুব বেশি লাভ হয়না। পানি কমলেই সুন্দর করে রিপেয়ার করা হবে।