চাকরী দেয়ার কথা বলে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রাজবাড়ী জেলা রেজিস্ট্রার গোলাম মাহবুবের বিরুদ্ধে ॥
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৪:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২০
- / ১৭১৭ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের আহ্লাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা রিনা আক্তার এমএ পাশ একজন গৃহিনী। সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য চাকরী করতে চেয়েছিলেন। চাকরীর আশায় ধার দেনা করে তিন বছর আগে রাজবাড়ী জেলা রেজিস্ট্রার গোলাম মাহবুবকে তিন দফায় দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। তার চাকরী হয়নি। টাকাও ফেরত দেননি গোলাম মাহবুুব। চাকরীর বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় অবর্র্ণনীয় কষ্টে দিন কাটছে তার।
রিনা আক্তারের মত এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। জেলা রেজস্ট্রার গোলাম মাহবুব চাকরী দেয়ার নাম করে রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা এলাকার চাকরী প্রত্যাশি বহু মানুষের কাছ থেকে অন্ততঃ অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবন, অনৈতিক কার্যকলাপসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তার ইয়াবা সেবন ও নারীদের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
গোলাম মাহবুরের প্রতারণার শিকার একজন ভুক্তভোগী একই গ্রামের মৃত শেহের আলী শেখের স্ত্রী জাহানারা বেগম গত ১৬ জুলাই তারিখে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু সে অভিযোগের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি জেলা প্রশাসন।
জাহানারা বেগম জানান, তার ছেলে ইকলাস শেখ এমএ পাশ করে বেকার বসে আছে। তার জামাতা সুজন শেখ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক। সুজনের মাধ্যম দিয়েই জেলা রেজিস্ট্রার গোলাম মাহবুবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ। তার ছেলের চাকরীর জন্য কয়েক দফায় গোলাম মাহবুবকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চাকরী হয়নি তার ছেলের। একবার একটি নিয়োগপত্র দেন। কিন্তু সেটিও ছিল ভুয়া। পরে তার কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানান টালবাহানা করতে থাকেন। একবার দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। গোলাম মাহবুব আস্ফালন করে বলেন, ‘কত চাকরী প্রার্থীর টাকা নিছি। কেউ কিছু করতে পারে নাই। সাংবাদিকরাও আমার কিছু করতে পারবেনা। তুইও আমার কিছু করতে পারবি না। তিনি অভিযোগ করেন, আবার টাকা চাইতে গেলে ছেলে ইকলাস ও জামাতা সুজনকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিয়েছেন গোলাম মাহবুব। জাহানারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা হতদরিদ্র মানুষ। সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছেলের চাকরীর জন্য টাকা দিয়েছি। আমারতো আর কেউ নাই। ছেলেটা একেবারে ‘পঙ্গু’ হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মো. শহীদও হয়েছেন গোলাম মাহবুবের প্রতারণার শিকার। তিনি জানান, তার স্ত্রীর চাকরীর জন্য দুই বছর আগে তিন দফায় দুই লাখ টাকা দিয়েছেন গোলাম মাহবুবকে। কিন্তু চাকরী হয়নি। মো. শহীদ বলেন, প্রথমে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে টাকার অংক বাড়াতে থাকে। শেষ পর্যন্ত চার লাখ টাকা চেয়েছিল। আমরা আর দেইনি। চাকরী না হওয়ায় টাকা চাইতে গেলে গোলাম মাহবুব নানান হুমকি ধমকি দেয়। বলেন যেভাবে পারো টাকা তুলে নিও।
ভুক্তভোগী রিনা আক্তার জানান, তার স্বামীর ছোট্ট এবকটি ওষুধের দোকান আছে। সংসার ভালোভাবে চলেনা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে রেজিস্ট্রি অফিসে নকলনবীশ পদে চাকরীর জন্য তিন দফায়গোলাম মাহবুবকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরী হয়না। আজকাল বলে ঘোরাতে থাকে। এক সপ্তাহ এক সপ্তাহ করে সময় নেয় । এই চাকরীর আশায় অন্য কোনো জায়গায় চাকরীর আবেদনও করিনি। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে তার চাকরীর বয়সও শেষ হয়ে গেছে। একদিন তার অফিসে গেলে গোলাম মাহবুব বলেন, কাজ হয়ে গেছে। আর এক সপ্তাহ লাগবে। একদিন শুক্রবারে তাকে ও শহীদকে বলা হয়; চাকরী ফাইনাল। তবে আজই এক লাখ টাকা লাগবে। আমরা টাকা দিতে অস্বীকার করায় ব্লাঙ্ক চেক দিতে বলেন। আমরা তাই দিয়েছি। কিন্তু চাকরী আর হয়নি। যখন বুঝতে পারলাম তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে তখন টাকা ফেরত চান। কিন্তু টাকা আর ফেরত দেননি। রিনা আক্তার ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন গোলাম মাহবুব। এই ক্ষতি পূরণ করবে কে?
এদিকে জেলা রেজিস্ট্রার গোলাম মাহবুবের ইয়াবা সেবন ও নারীদের সাথে অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এনিয়ে শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নানান আলোচনা সমালোচনা চলছে তাকে নিয়ে।
জেলা রেজিস্ট্রার গোলাম মাহবুবের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার। একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া তো আমি সম্পন্ন করিনা। একটি গ্রুপের কাজ বাস্তবায়ন না করায় এসব করছে। ফেসবুকে ইয়াবা সেবনের ভিডিও সম্পর্কে বলেন, এটিও একটি কুচক্রি মহলেরই কাজ। আমার জীবদ্দশায় এসব ঘটে নাই। একটি কুচক্রি মহল জিম্মি করে এসব করছে। এসব আমলে নেয়ার সুযোগ নাই। যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, জাহানারা বেগমের অভিযোগের বিষয়টি মনে নেই। তবে তার বিরুদ্ধে অফিসে ঠিকমতো কাজ না করার বেশ কয়েকটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কোনো কিছু আমার আওতায় পড়েনা।