Dhaka ০৭:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসুন বাঁচার জন্য সচেতন হই

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ১০:২০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০
  • / ১৭৩০ জন সংবাদটি পড়েছেন

সৌমিত্র শীল চন্দন: 

আমরা এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সরকারিভাবেই দেশকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই সময়ের মধ্যে (অর্থ্যৎ ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত) দেশে করোনা আক্রান্ত হয় ৩৯ জন আর মারা যায় পাঁচজন। ২৫ মার্চ তারিখে দেশে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক  ছড়াতে থাকে। কিন্তু আতঙ্ক থাকলেও মানুষের মাঝে সচেতন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। লকডাউনের দুই মাস পাঁচদিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বেড়েছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ৩১ মে পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জন। ৩১ মার্চ একদিনেই আক্রান্ত ২৫৪২ জন। যখন দেশে একজন দুজন করে আক্রান্ত হচ্ছিল তখন লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আর যখন হাজার হাজার আক্রান্ত হচ্ছে তখন এলো লকডাউন শিথিলের ঘোষণা। গণপরিবহনও চালু হচ্ছে সোমবার থেকে।

দীর্ঘ সময় সবকিছু অবরুদ্ধ বন্ধ থাকায় দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কর্মহীন মানুষের কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি। থেমে আছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। জীবন জীবীকার তাগিদেই হয়তো করোনার প্রবল সংক্রমণের মাঝেও ঘোষণাটি এসেছে। ভয়ের জায়গা এখানেই। যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে। একজনের থেকে আরেক জনের মাঝে ছড়ায়। এখানে সচেতন হওয়া ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো; দেশে করোনা সংক্রমণের তিন মাস হতে চললো। আমরা সেভাবে নিজেদের সচেতন করে তুলতে পারিনি। তবে রোগটি যে ছোঁয়াচে এটা  এতোদিনে সবাই জেনে গেছে- তা এক প্রকার নিশ্চিত। হাঁচি কাশির মাধ্যমেও যে ছড়ায় তাও জানা হয়ে গেছে।  কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে রোগটির সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে কী করা উচিৎ। কী করলে রক্ষা পাওয়া যাবে তার কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।

শহর বন্দর হাট বাজারে মানুষ গিজগিজ করছে। একজনের সাথে আরেকজন গা ঘেঁষাঘেষি করে চলছে। বিকট শব্দ করে হাঁচি দিচ্ছে। তার পাশে যে কয়েকজন মানুষ রয়েছে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কাশি দেয়ার সময়ও মুখের কাছে হাতটা পর্যন্ত রাখছে না। সে হয়তো জানেই না তার হাঁচি কাশিতে আরেকজনের সমস্যা হতে পারে।

যেখানে এই সময়ে অন্ততঃ মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক। সেখানে বাজারে ঘোরাঘুরি করা কিছু মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যাদের আছে তাদের মধ্যে অনেকের মাস্ক থুতনির নীচে নামানো। কেউ আবার স্টাইল করে কানে ঝুলিয়ে রেখেছে। অনেকেই পড়েছে নোংরা মাস্ক্। নোংরা বলতে দীর্ঘদিন ধরে একই মাস্ক ব্যবহার করছে। একজন আরেকজনের মাস্ক ব্যবহার করছে এমনটিও শোনা গেছে। বাজারের অনেক দোকানদার মাস্ক ছাড়াই করছে বেচাকেনা। সম্ভবত এমন অবস্থা বিরাজ করছে সবখানেই।

জীবন জীবীকার কারণে আনলকডাউন করা হলো ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ যদি এভাবে অসচেতনভাবে চলাফেরা করে- তাহলে রোগটির সংক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচবে কীভাবে। প্রশ্ন হলো মানুষের মধ্যে কেন এতো অসচেতনতা। কেন তাদেরকে সচেতন করে তোলা যাচ্ছে না? আমি ধরেই নিলাম; দেশের বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত। কিন্তু নিজের ভালো বোঝেনা এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা। দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সাধারণ রোগে অসুস্থ হলেও তার চিকিৎসা পাওয়া দুরূহ। করোনায় একজন আক্রান্ত হলে তার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবকেও যে ঝুঁকির মুখে থাকছে সেটা কেন বুঝতে চাইছে না। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শিল্পপতি, সচিব, এমপি, মন্ত্রী কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না করোনা।

সামনে আর কঠিন সময় আসছে। আমাদেরকে এই কঠিন সময় মোকাবেলা করেই বাঁচতে হবে। সবার আগেতো নিজেকে সচেতন হতে হবে।

অন্ততঃপক্ষে আমরা যদি হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলি। হ্যাঁ মানছি; হাঁচি, কাশি মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই সময়ে এটি খুবই ভয়ানক ব্যাপার। সেদিন একজনকে কাশতে দেখে বলেছিলাম, আপনার কাশিটা সারিয়ে ফেলুন। তিনি বলেছিলেন; ‘আমাদের পেশার মানুষের কাশি বারোমাসি অসুখ। এটা সারেনা। কারণ গরমের সময়ও মোটা জামা কাপড় পরতে হয়।’ হতে পারে এটা। কিন্তু কাঁশি বা হাঁচি দেয়ার সময় যদি জনসমাগম স্থল থেকে একটু দূরে গিয়ে মুখের কাছে কনুই নিয়ে হাঁচি কাশি দেন তাহলে আপনি আপনার পাশের মানুষদের রক্ষা করলেন। আরও ভালো হয় যদি হাঁচি কাশি দেয়ার পর হাত ধুয়ে ফেলেন।

দ্বিতীয়ত  মাস্ক পরা। আমাদের সবারই উচিৎ মাস্ক পরা। যখন আমরা বাইরে বের হবো তখন অবশ্যই মাস্ক পরবো। তবে কিছুতেই একজনের মাস্ক আরেকজন ব্যবহার করবোনা। বাড়ি গিয়ে  মাস্ক ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার পরতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আইইইডিসিআর এর মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনার একটি লেখা ফেসবুকে পেয়েছি। ভালো লেগেছে লেখাটি। লেখাটির অংশবিশেষ তুলে ধরছি। আপনারা এটিও অনুসরণ করতে পারেন।

Ôলক ডাউন উঠে যাবে হয়ত কয়েকদিন পরই। কেন উঠবে সেটাও পরিষ্কার। হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মরবে। লকডাউন রাখা হয়েছিল ভাইরাসটা যেন ধীরে ছড়ায়, ততদিনে যেন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, পুরো পৃথিবীর ৭০০ কোটির সবার হাতে হাতে এই ভ্যাক্সিন পৌঁছাতে, কম করে হলেও ৩-৪ বছর লাগবে। তাই এমন অনন্তকাল লক ডাউন রাখা সম্ভবও না, সে যত উন্নত রাষ্ট্রই হোক না কেন। চীন,ইতালিতেও উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে লকডাউন।
তবে আমরা কি এভাবেই মরব?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, হ্যা এবং এটা একদমই প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রতিটা যুগে যুগে এমন Evolution হয়েছে। এক যুগে ‘ডাইনোসর’ ছিল, কিন্তু প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে নি বলে তারা আজ নেই। অথচ সেই জুরাসিক যুগের ‘তেলাপোকা’ এখনো টিকে আছে। কারণ সে নিজেকে Evolve করে, নিজেকে চেঞ্জ করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পেরেছে। ম্যামথও ছিল তখন, হয়ত ‘ম্যামথ’ তার রুপ চেঞ্জ করেই বর্তমানের হাতি হয়েছে। এগুলাই Evolution।

তো এগুলা বলার মানে কি? এগুলা জেনে কি করব?
আমাদেরও প্রকৃতির উপাদানের সাথে Evolve হতে হবে। লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। আমাদের নিজেদেরও চেঞ্জ হতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই টিকে থাকা সম্ভব।

১) অভ্যাসঃ বাজে অভ্যাসগুলা ত্যাগ করতে হবে। কথায় কথায় মুখে আঙুল দেয়া, কলমের মুখ কামড়ানো, আঙুল জিব্বায় লাগিয়ে কাগজ উল্টানো, সেপ দিয়ে টাকা গোনা ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সাথে মাস্ক পড়তে হবে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। ২০০৩ এ জাপানে সার্স ভাইরাসের মহামারির পর তাদের মধ্যে এই অভ্যেস গুলা গড়ে উঠেছিল, যা আজ খুব ভাল কাজ করতেসে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে।

২) এনভায়রনমেন্টঃ আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা এমন পরিবেশে আছি। নয়ত এই ঘনবসতি দেশ কবেই শেষ হয়ে যেত। আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা খুব ভাল কাজ করতেসে। আর্দ্রতা বেশি থাকা মানে বাতাসে ধুলাবালি কম উড়বে। শীতে আর্দ্রতা কম থাকে, চারিদিক শুষ্ক থাকে বলে বেশি ধুলা ওড়ে। এজন্য শীত প্রধান দেশে এই ভাইরাস হানা দিতেসে বেশি। তাই ঠান্ডা এসি এভোয়েড করতে হবে, এসি রুমের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।

৩) ইমিউনিটিঃ এটাই মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট। এই পুরো পোস্ট লিখার পেছনে এই পয়েন্টটাই দায়ী। হার্ড ইমিউনিটির বিকল্প নাই। আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করতেই হবে। সেটা কিভাবে?

#ফিজিক্যালিঃ
* নিয়ম মাফিক ঘুমাতে হবে, রাত জাগা খুব খারাপ শরীর ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
* প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে, প্রায় ১৫-৩০ মিনিট। মাসল এক্টিভিটি বাড়াতে হবে।
* প্রায়ই রোদে ঘুরতে হবে ছাদে। রোদ দরকার, ভিটামিন ডি লাগবেইÕ|

আমরা যদি আমাদের সচেতন না হই তাহলে বিপদে পড়বে সবাই। বিপদে পড়বে আপনার পরিবার। বিপদে পড়বে আপনার শহর। বিপদে পড়বে দেশ।  তাই সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম কানুন মেনে চলি। দেশ এবং দেশের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করি।

আসুন বাঁচার জন্য সচেতন হই। সচেতন হয়ে বাঁচি।

৩১.৫.২০২০

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক; দৈনিক জনতার আদালত

জেলা প্রতিনিধি: দৈনিক সমকাল ও দেশটিভি

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

আসুন বাঁচার জন্য সচেতন হই

প্রকাশের সময় : ১০:২০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুন ২০২০

সৌমিত্র শীল চন্দন: 

আমরা এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছি। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সরকারিভাবেই দেশকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই সময়ের মধ্যে (অর্থ্যৎ ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত) দেশে করোনা আক্রান্ত হয় ৩৯ জন আর মারা যায় পাঁচজন। ২৫ মার্চ তারিখে দেশে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক  ছড়াতে থাকে। কিন্তু আতঙ্ক থাকলেও মানুষের মাঝে সচেতন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। লকডাউনের দুই মাস পাঁচদিন পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বেড়েছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ৩১ মে পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জন। ৩১ মার্চ একদিনেই আক্রান্ত ২৫৪২ জন। যখন দেশে একজন দুজন করে আক্রান্ত হচ্ছিল তখন লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আর যখন হাজার হাজার আক্রান্ত হচ্ছে তখন এলো লকডাউন শিথিলের ঘোষণা। গণপরিবহনও চালু হচ্ছে সোমবার থেকে।

দীর্ঘ সময় সবকিছু অবরুদ্ধ বন্ধ থাকায় দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কর্মহীন মানুষের কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি। থেমে আছে উন্নয়ন কর্মকান্ড। জীবন জীবীকার তাগিদেই হয়তো করোনার প্রবল সংক্রমণের মাঝেও ঘোষণাটি এসেছে। ভয়ের জায়গা এখানেই। যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে। একজনের থেকে আরেক জনের মাঝে ছড়ায়। এখানে সচেতন হওয়া ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো; দেশে করোনা সংক্রমণের তিন মাস হতে চললো। আমরা সেভাবে নিজেদের সচেতন করে তুলতে পারিনি। তবে রোগটি যে ছোঁয়াচে এটা  এতোদিনে সবাই জেনে গেছে- তা এক প্রকার নিশ্চিত। হাঁচি কাশির মাধ্যমেও যে ছড়ায় তাও জানা হয়ে গেছে।  কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে রোগটির সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে কী করা উচিৎ। কী করলে রক্ষা পাওয়া যাবে তার কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না।

শহর বন্দর হাট বাজারে মানুষ গিজগিজ করছে। একজনের সাথে আরেকজন গা ঘেঁষাঘেষি করে চলছে। বিকট শব্দ করে হাঁচি দিচ্ছে। তার পাশে যে কয়েকজন মানুষ রয়েছে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কাশি দেয়ার সময়ও মুখের কাছে হাতটা পর্যন্ত রাখছে না। সে হয়তো জানেই না তার হাঁচি কাশিতে আরেকজনের সমস্যা হতে পারে।

যেখানে এই সময়ে অন্ততঃ মাস্ক পরাটা বাধ্যতামূলক। সেখানে বাজারে ঘোরাঘুরি করা কিছু মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যাদের আছে তাদের মধ্যে অনেকের মাস্ক থুতনির নীচে নামানো। কেউ আবার স্টাইল করে কানে ঝুলিয়ে রেখেছে। অনেকেই পড়েছে নোংরা মাস্ক্। নোংরা বলতে দীর্ঘদিন ধরে একই মাস্ক ব্যবহার করছে। একজন আরেকজনের মাস্ক ব্যবহার করছে এমনটিও শোনা গেছে। বাজারের অনেক দোকানদার মাস্ক ছাড়াই করছে বেচাকেনা। সম্ভবত এমন অবস্থা বিরাজ করছে সবখানেই।

জীবন জীবীকার কারণে আনলকডাউন করা হলো ঠিক আছে। কিন্তু মানুষ যদি এভাবে অসচেতনভাবে চলাফেরা করে- তাহলে রোগটির সংক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচবে কীভাবে। প্রশ্ন হলো মানুষের মধ্যে কেন এতো অসচেতনতা। কেন তাদেরকে সচেতন করে তোলা যাচ্ছে না? আমি ধরেই নিলাম; দেশের বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত। কিন্তু নিজের ভালো বোঝেনা এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা। দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সাধারণ রোগে অসুস্থ হলেও তার চিকিৎসা পাওয়া দুরূহ। করোনায় একজন আক্রান্ত হলে তার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবকেও যে ঝুঁকির মুখে থাকছে সেটা কেন বুঝতে চাইছে না। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শিল্পপতি, সচিব, এমপি, মন্ত্রী কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না করোনা।

সামনে আর কঠিন সময় আসছে। আমাদেরকে এই কঠিন সময় মোকাবেলা করেই বাঁচতে হবে। সবার আগেতো নিজেকে সচেতন হতে হবে।

অন্ততঃপক্ষে আমরা যদি হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলি। হ্যাঁ মানছি; হাঁচি, কাশি মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এই সময়ে এটি খুবই ভয়ানক ব্যাপার। সেদিন একজনকে কাশতে দেখে বলেছিলাম, আপনার কাশিটা সারিয়ে ফেলুন। তিনি বলেছিলেন; ‘আমাদের পেশার মানুষের কাশি বারোমাসি অসুখ। এটা সারেনা। কারণ গরমের সময়ও মোটা জামা কাপড় পরতে হয়।’ হতে পারে এটা। কিন্তু কাঁশি বা হাঁচি দেয়ার সময় যদি জনসমাগম স্থল থেকে একটু দূরে গিয়ে মুখের কাছে কনুই নিয়ে হাঁচি কাশি দেন তাহলে আপনি আপনার পাশের মানুষদের রক্ষা করলেন। আরও ভালো হয় যদি হাঁচি কাশি দেয়ার পর হাত ধুয়ে ফেলেন।

দ্বিতীয়ত  মাস্ক পরা। আমাদের সবারই উচিৎ মাস্ক পরা। যখন আমরা বাইরে বের হবো তখন অবশ্যই মাস্ক পরবো। তবে কিছুতেই একজনের মাস্ক আরেকজন ব্যবহার করবোনা। বাড়ি গিয়ে  মাস্ক ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার পরতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আইইইডিসিআর এর মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনার একটি লেখা ফেসবুকে পেয়েছি। ভালো লেগেছে লেখাটি। লেখাটির অংশবিশেষ তুলে ধরছি। আপনারা এটিও অনুসরণ করতে পারেন।

Ôলক ডাউন উঠে যাবে হয়ত কয়েকদিন পরই। কেন উঠবে সেটাও পরিষ্কার। হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে মরবে। লকডাউন রাখা হয়েছিল ভাইরাসটা যেন ধীরে ছড়ায়, ততদিনে যেন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের কথা হলো, পুরো পৃথিবীর ৭০০ কোটির সবার হাতে হাতে এই ভ্যাক্সিন পৌঁছাতে, কম করে হলেও ৩-৪ বছর লাগবে। তাই এমন অনন্তকাল লক ডাউন রাখা সম্ভবও না, সে যত উন্নত রাষ্ট্রই হোক না কেন। চীন,ইতালিতেও উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে লকডাউন।
তবে আমরা কি এভাবেই মরব?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, হ্যা এবং এটা একদমই প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রতিটা যুগে যুগে এমন Evolution হয়েছে। এক যুগে ‘ডাইনোসর’ ছিল, কিন্তু প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে নি বলে তারা আজ নেই। অথচ সেই জুরাসিক যুগের ‘তেলাপোকা’ এখনো টিকে আছে। কারণ সে নিজেকে Evolve করে, নিজেকে চেঞ্জ করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পেরেছে। ম্যামথও ছিল তখন, হয়ত ‘ম্যামথ’ তার রুপ চেঞ্জ করেই বর্তমানের হাতি হয়েছে। এগুলাই Evolution।

তো এগুলা বলার মানে কি? এগুলা জেনে কি করব?
আমাদেরও প্রকৃতির উপাদানের সাথে Evolve হতে হবে। লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। আমাদের নিজেদেরও চেঞ্জ হতে হবে। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই টিকে থাকা সম্ভব।

১) অভ্যাসঃ বাজে অভ্যাসগুলা ত্যাগ করতে হবে। কথায় কথায় মুখে আঙুল দেয়া, কলমের মুখ কামড়ানো, আঙুল জিব্বায় লাগিয়ে কাগজ উল্টানো, সেপ দিয়ে টাকা গোনা ইত্যাদি যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। সাথে মাস্ক পড়তে হবে এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। ২০০৩ এ জাপানে সার্স ভাইরাসের মহামারির পর তাদের মধ্যে এই অভ্যেস গুলা গড়ে উঠেছিল, যা আজ খুব ভাল কাজ করতেসে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে।

২) এনভায়রনমেন্টঃ আমরা খুব ভাগ্যবান যে আমরা এমন পরিবেশে আছি। নয়ত এই ঘনবসতি দেশ কবেই শেষ হয়ে যেত। আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা খুব ভাল কাজ করতেসে। আর্দ্রতা বেশি থাকা মানে বাতাসে ধুলাবালি কম উড়বে। শীতে আর্দ্রতা কম থাকে, চারিদিক শুষ্ক থাকে বলে বেশি ধুলা ওড়ে। এজন্য শীত প্রধান দেশে এই ভাইরাস হানা দিতেসে বেশি। তাই ঠান্ডা এসি এভোয়েড করতে হবে, এসি রুমের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।

৩) ইমিউনিটিঃ এটাই মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট। এই পুরো পোস্ট লিখার পেছনে এই পয়েন্টটাই দায়ী। হার্ড ইমিউনিটির বিকল্প নাই। আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করতেই হবে। সেটা কিভাবে?

#ফিজিক্যালিঃ
* নিয়ম মাফিক ঘুমাতে হবে, রাত জাগা খুব খারাপ শরীর ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
* প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে, প্রায় ১৫-৩০ মিনিট। মাসল এক্টিভিটি বাড়াতে হবে।
* প্রায়ই রোদে ঘুরতে হবে ছাদে। রোদ দরকার, ভিটামিন ডি লাগবেইÕ|

আমরা যদি আমাদের সচেতন না হই তাহলে বিপদে পড়বে সবাই। বিপদে পড়বে আপনার পরিবার। বিপদে পড়বে আপনার শহর। বিপদে পড়বে দেশ।  তাই সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম কানুন মেনে চলি। দেশ এবং দেশের মানুষকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করি।

আসুন বাঁচার জন্য সচেতন হই। সচেতন হয়ে বাঁচি।

৩১.৫.২০২০

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক; দৈনিক জনতার আদালত

জেলা প্রতিনিধি: দৈনিক সমকাল ও দেশটিভি