পাংশায় সংঘর্ষে স্কুলশিক্ষক নিহতের ঘটনায় ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- প্রকাশের সময় : ১০:১১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ মার্চ ২০২০
- / ১৫৫৬ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের সুবর্ণকোলা গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্কুল শিক্ষক আসাদুল খান নিহত হওয়ার ঘটনায় ৫১ জনের নাম বিরুদ্ধে পাংশা থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ৫১ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৫ জনকে।
শুক্রবার ভোরে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের সুবর্ণকোলা গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মাদ্রাসা শিক্ষক আসাদুল খান (৪২) গুলিতে নিহত হন। তিনি একই গ্রামের খোরশেদ আলী খানের ছেলে। একই উপজেলার সেনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় অন্ততঃ সাতজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। এরা হলো একই গ্রামের হাসেম খানের মিরাজ খান ও আব্বাস জোয়ার্দারের ছেলে জাফর জোয়ার্দার। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, আসাদুল গুলিতে নিহত হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, টেটাবিদ্ধ হয়ে আসাদুল নিহত হয়েছে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) ফজলুল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ দিনভর অভিযান চালিয়ে আটক করে ছয়জনকে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ও পরাজিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জজ আলীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। মাঝে মধ্যেই ঘটে রক্তক্ষীয় সংঘর্ষের ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মাঝরাতের দিকে যা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই আসাদুল খান নিহত হন। তার লাশ পার্শ্ববর্তী গ্রাম শান্তিখোলা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। আসাদুলের বুকে ও পায়ে বড় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহত ও আহতরা সবাই ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামানের সমর্থক বলে জানা গেছে। এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলাকাবাসী জানান, জজ আলী ও কামরুজ্জামান গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে এক পক্ষের সমর্থক অপর পক্ষের সমর্থককে মারধর করে। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। ভোরের দিকে এলাকায় প্রচন্ড গোলাগুলি হয়। এসময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলিতে আসাদুল মারা যায়। সে খুব ন¤্র ভদ্র ছেলে ছিল বলে জানান তিনি।
কসবামাজাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান পিন্টু জানান, তাদের গ্রামে কয়েকজন খারাপ ছেলে আছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাঞ্জাম ফ্যাসাদ করে আসছে। যাদের কয়েকজন কামরুজ্জামান পক্ষে এবং কয়েকজন জজ আলীর পক্ষে। তারা নিজেরা দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে জড়িয়ে দায় চাপায় দলের উপর। বৃহস্পতিবার দিনভরই দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। পুলিশও প্রহরায় ছিল। ভোর পাঁচটার দিকে পুলিশ সরে যাওয়ার পরই ঘটে এ ঘটনা।
পাংশা থানার ওসি মো. আহসানউল্লাহ জানান, শিক্ষক আসাদুল খান নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছিল তাদের মধ্যে পাঁচজন এ মামলার আসামি। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হয়েছে। অপরজন অন্য একটি মামলার আসামি। মামলার বাকী আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। শনিবার রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে আসাদুলের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন জানান, সুবর্ণকোলা গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, কসবমাজাইলে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। যেটা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। দ্ইু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পড়ে আসাদুল নিহত হয়েছেন। যতদূর জানা গেছে তিনি সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।