ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বোন
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
- / ১৬১০ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ সামছুদ্দিন মিয়া এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। ৭১ এর রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বোন অহিদা আক্তার। বিভিন্ন দপ্তরে দালিলিক প্রমাণসহ আবেদন নিবেদন করেও লাভ হয়নি। সামছুদ্দিন মিয়া রাজবাড়ী সদর উপজেলার সজ্জনকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথেও কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সামছুদ্দিন মিয়া। বর্তমানে তিনি পথে পথে ঘোরেন। কখনও সময় কাটান রেলগেট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে বসে থেকে।
সামছুদ্দিন মিয়ার বোন অহিদা আক্তার জানান, ৭১ এর যুদ্ধে তার ভাই জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিবার্তায় তার নাম ছিল। তার সিরিয়াল নং ০১১১০১০২৭। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেলা প্রশাসন থেকে সংবর্ধনাও পেয়েছিলেন। তার ভাইয়ের কোনো সন্তান নেই। ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে তার ভাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার পর তার স্ত্রী তাকে ফেলে চলে যায়। পরে কীভাবে তার ভাইয়ের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেল তা তিনি জানেন না। ১৯৯৮ সালে রাজবাড়ী সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ তালেব সামছুদ্দিন মিয়ার সমর্থনে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছিলেন। প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন, স্বধীনতা সংগ্রামে সামছুদ্দিন মিয়া ৮ নং সেক্টরের অধীন রাজবাড়ী থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
এসব আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আমার ভাই সামছুদ্দিন মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৮ নং সেক্টরের অন্যতম কমান্ডার প্রয়াত ইলিয়াস মিয়ার অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিবার্তায় আমার ভাইয়ের নাম লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে লাল মুক্তিবার্তায় তার নাম প্রকাশিত হয়নি। অনলাইনে দুইবার আবেদন করেও আমার ভাইয়ের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারিনি। বর্তমানে আমার ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পথে পথে ঘুরছে।
এছাড়া একই সালের ১৯ নভেম্বর তারিখে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ও তার ভাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ভাই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন কী না জানিনা। অন্ততঃ ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার লাশ যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
রাজবাড়ীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম এ প্রসঙ্গে বলেন, সামছুদ্দিন মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কীভাবে তার নাম বাদ গেল তা আমি জানিনা। তিনি তো ভাতা পাননি। ভাতা পাওয়ার পরও কয়েক মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ গেছে। তবে সামছুদ্দিন মিয়ার নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান জানান, যাচাই বাছাই কার্যক্রম ২০১৭ সালে শেষ হয়েছে।