সংযোগ সড়ক নেই ॥ কার স্বার্থে নির্মাণ হয় এসব সেতু?
- প্রকাশের সময় : ০৭:৪৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / ১৫৪৫ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না কোনো সেতুর। রাজবাড়ী সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে পাওয়া গেছে এমন চারটি সেতু। সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২০১৫Ñ১৬ অর্থ বছরে এবং ২০১৭Ñ১৮ অর্থ বছরে সেতু চারটি নির্মিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার ভিত্তিতে এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭Ñ১৮ অর্থ বছরে রামকান্তপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাটিপাড়া জামে মসজিদের পাশে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ৩২ ফুট লম্বা ও ১৪ ফুট চওড়া সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। সেতুটির নামফলকে উদ্বোধক হিসেবে রাজবাড়ীÑ১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নাম রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজবাড়ীÑবালিয়াকান্দি সড়কের পাশে নির্মিত সেতুটির ওপারে বাম পাশে একটি কবরস্থান এবং ডান পাশে কয়েকটি বসত ঘর রয়েছে। সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকার মানুষের খুব একটা কাজে আসছেনা। এলাকার বাসিন্দা সুবহান মন্ডল, আনোয়ার শেখ সহ অনেকেই জানান, সেতুটি নির্মাণ হওয়াতে কবরস্থানে যাওয়ার সুবিধা হয়েছে। তবে রাস্তা থাকলে আরও ভাল হতো।
রামকান্তপুর ইউপি মেম্বার আবুল হাশেম খান জানান, ওই খানে একটি কবরস্থান আছে। সেখানে যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে খুব শীগগীরই রাস্তা নির্মাণ করা হবে। কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
একই অর্থ বছরে একই প্রকল্পের অধীনে বাণিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রামÑবাণিবহ খালের হারান মন্ডলের বাড়ির পাশে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৯ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৩৬ ফুট লম্বা সেতু। এই সেতুটির এক পাশে বয়ে গেছে রাস্তা। অপর পাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সেতুটির পাশে কয়েকটি বসতঘর আছে। যেখানে বাস করে দুটি পরিবার।
এই সেতুটি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সৈয়দ পাঁচুরিয়া মধ্যপাড়া মন্দির সংলগ্ন খালের উপর একই প্রকল্পের অধীনে ২০১৫Ñ১৬ অর্থ বছরে নির্মাণ করা হয় ৩২ ফুট একটি সেতু। যেটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭২২ টাকা। এই সেতুটির ওপারেও রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। ডানপাশে দুটি বসতঘরে বাস করে একটি পরিবার।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, রাস্তা না থাকায় এই সেতু দুটি কোনো কাজেই আসছে না। কার স্বার্থে কার ভালোর জন্য যে এই সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছে তা বোঝা দুষ্কর। তবে মাঠ থেকে ফসল আনা নেয়ায় একটু সুবিধা হয়। আর সেতুটির পাশে তিনটি পরিবার বাস করে। তাদের বেশি সুবিধা হয়।
একই গ্রামের অনতিদূরে আলতাফের বাড়ির কাছে আরও একটি সেতু। ১৫ ফুট লম্বা সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১৫Ñ১৬ অর্থ বছরে। এই সেতুটির একপাশে রাস্তা। অন্য পারে ব্যক্তি মালিকানাধীন মেহগনি বাগান। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ, দেলোয়ার গাজীসহ বেশ কয়েকজন জানান, ব্রিজ পার হয়ে বাগানের ভেতর দিয়ে তালুকদার বাড়ি যাবার পথ। আশে পাশে কয়েকটি বাড়ি আছে। যারা ব্রিজ পার হয়ে যাতায়াত করে। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন রাস্তাটি বন্ধ করে দিলে তাদের আর যাতায়াতের পথ থাকে না। ফলে এই সেতুটি অনেকটাই অকার্যকর।
বাণিবহ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বাচ্চু এ প্রসঙ্গে বলেন, খেতের ফসল আনা নেয়ার সুবিধার জন্য সেতুগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। ওখানে কয়েকটি বাড়ি আছে। তারাও যাতায়াত করতে পারে। তবে সেতু দুটির ওপারে রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। খেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা করবেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাস্তার জন্য কথাবার্তা চলছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম মনোয়ার মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, এই প্রকল্পে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ এবং এমপির অনুমোদনের ভিত্তিতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ হয়ে থাকে। মাঠিপাড়ায় নির্মিত সেতুটির পাশে একটি কবরস্থান আছে। কবরস্থানে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ওখান দিয়ে রাস্তা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মানুষ জমি দিতে চায়নি। যেকারণে রাস্তা করতে পারেননি। আর বাণিবহে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা যাতে খেত থেকে ফসল কেটে সহজেই নিয়ে আসতে পারে এজন্য নির্মাণ করা হয়েছিল।