Dhaka ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় রাজবাড়ীতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

সংবাদদাতা-
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫১:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯
  • / ১৬৫৩ জন সংবাদটি পড়েছেন

Close up of Yellow paddy rice plant. spike rice field


জনতার আদালত অনলাইন ॥ উৎপাদন খরচ না ওঠায় এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় রাজবাড়ীতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। ফলে ধান চাষের মৌসুমে অনেক জমিই অনাবাদি ছিল। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি ধান উৎপাদন কিছু টা হলেও কম হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে তারা বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আবাদ হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৫৮ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।
চাষীরা জানান, তাদের কোন প্রকার প্রনোদনা দেয়া হয়নি। সরকারি ভাবে খাদ্য গুদামে ২৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫০জন কৃষক তাদের উৎপাদিত ২০ মেট্রিক টন বিক্রি করেছে। চাহিদা তালিকা দেয়া হয়েছিল চারশ জন কৃষকের।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বারুগ্রামের মিল মালিক ও ধানচাষী শ্যামল কুমার দাস জানান, ২২শতাংশ জমিতে ১৫মণ পর্যন্ত ধান হয়ে থাকে । পানি ও সেচ বাবদ ৪ মণ ধান ছেড়ে দিতে হয়। বাকী থাকে ১১ মণ। ধানের বর্তমান বাজার মূল্য ছয় হাজার ছয়শ টাকা। পরিবহন ও খাজনাসহ খরচ হয় ছয়শ টাকা। জমির লীজের তিন হাজার টাকা, রোপণ ব্যয় দুই হাজার টাকা, সার ও ওষুধ খরচ দুই হাজার টাকা, জমির আগাছা দমনের জন্য খরচ দেড় হাজার টাকা, ধান কর্তন করতে দেড় হাজার টাকা। এতে প্রতি ২২শতাংশ জমিতে চার হাজার চারশ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। খড় থেকে যে টাকা আয় হয় তাতেও পূরণ হয়না। এছাড়া গুটি স্বর্ণা নামে যে ধান কৃষকরা আবাদ করেছে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে।
কৃষক যুগল দাস বলেন, তিনি নিজের দেড় একর জমিতে ধান চাষ করেননি। প্রতিবেশি শৈলেন দাসও তার দুই একর জমিতে ধান চাষ করেননি। কেউ তাদের জমি খাজনা বা বর্গা নিতেও আসেনি। ফলে জমি অনাবাদি রয়ে গেছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফজলুর রহমান এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, চাষীরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাপারটি এমন নয়। উৎপাদন খরচ প্রচন্ডভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমাতে তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো লেবার খরচ। যদি কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তাহলে খরচ অনেকটা কমে যাবে। কৃষি উপকরণের খরচ হিসেবে সরকার ৫০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এ কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা আগামীতে আরও বৃহৎভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবো।

Tag :

সংবাদটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন-

ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় রাজবাড়ীতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

প্রকাশের সময় : ০৮:৫১:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯


জনতার আদালত অনলাইন ॥ উৎপাদন খরচ না ওঠায় এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় রাজবাড়ীতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। ফলে ধান চাষের মৌসুমে অনেক জমিই অনাবাদি ছিল। এতে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি ধান উৎপাদন কিছু টা হলেও কম হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে তারা বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আবাদ হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৫৮ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন।
চাষীরা জানান, তাদের কোন প্রকার প্রনোদনা দেয়া হয়নি। সরকারি ভাবে খাদ্য গুদামে ২৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫০জন কৃষক তাদের উৎপাদিত ২০ মেট্রিক টন বিক্রি করেছে। চাহিদা তালিকা দেয়া হয়েছিল চারশ জন কৃষকের।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বারুগ্রামের মিল মালিক ও ধানচাষী শ্যামল কুমার দাস জানান, ২২শতাংশ জমিতে ১৫মণ পর্যন্ত ধান হয়ে থাকে । পানি ও সেচ বাবদ ৪ মণ ধান ছেড়ে দিতে হয়। বাকী থাকে ১১ মণ। ধানের বর্তমান বাজার মূল্য ছয় হাজার ছয়শ টাকা। পরিবহন ও খাজনাসহ খরচ হয় ছয়শ টাকা। জমির লীজের তিন হাজার টাকা, রোপণ ব্যয় দুই হাজার টাকা, সার ও ওষুধ খরচ দুই হাজার টাকা, জমির আগাছা দমনের জন্য খরচ দেড় হাজার টাকা, ধান কর্তন করতে দেড় হাজার টাকা। এতে প্রতি ২২শতাংশ জমিতে চার হাজার চারশ টাকা করে লোকসান দিতে হচ্ছে। খড় থেকে যে টাকা আয় হয় তাতেও পূরণ হয়না। এছাড়া গুটি স্বর্ণা নামে যে ধান কৃষকরা আবাদ করেছে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে।
কৃষক যুগল দাস বলেন, তিনি নিজের দেড় একর জমিতে ধান চাষ করেননি। প্রতিবেশি শৈলেন দাসও তার দুই একর জমিতে ধান চাষ করেননি। কেউ তাদের জমি খাজনা বা বর্গা নিতেও আসেনি। ফলে জমি অনাবাদি রয়ে গেছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফজলুর রহমান এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, চাষীরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাপারটি এমন নয়। উৎপাদন খরচ প্রচন্ডভাবে বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমাতে তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়ার আরেকটি কারণ হলো লেবার খরচ। যদি কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তাহলে খরচ অনেকটা কমে যাবে। কৃষি উপকরণের খরচ হিসেবে সরকার ৫০ ভাগ পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এ কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা আগামীতে আরও বৃহৎভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবো।