বালিয়াকান্দিতে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি ॥ নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৮
- / ১৫৬৯ জন সংবাদটি পড়েছেন
জনতার আদালত অনলাইন ॥ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শোলাকুড়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় চার শ্রমিক নিহতের ঘটনায় রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে রাজ্জাক জুট মিলের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা জানান, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার আব্দুর রাজ্জাক খান জুট মিল কর্তৃপক্ষ শনিবার নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। নিহতের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব ও ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে জুট মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী নিহতদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এবিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেন জানান, চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করবে। এ কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির অপর তিন সদস্য হলেন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা, রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি এবং এলজিইডি প্রতিনিধি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দুপুরে রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়াগামী কালুখালী ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনের ধাক্কায় রাজ্জাক খান জুট মিলের শ্রমিক বহনকারী নসিমনের চার যাত্রী নিহত ও ১০ জন আহত হয়। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা, রাজবাড়ী সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম, বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম আজমল হুদা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সলিসিউটর মুহাম্মদ মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ হারুন অর রশিদ হারুন, সহ-সভাপতি গোলাম শওকত সিরাজ, বহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম নিহত শ্রমিকদের বাড়ীতে যান এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলো একই উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের এলেম সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শহিদুল শেখের ছেলে সরোয়ার, শুকুর আলীর ছেলে সাকিল ও আলেক মৃধার ছেলে মজনু মৃধা। নিহত আহতরা সবাই ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চরনওপাড়া রাজ্জাক জুট মিলের শ্রমিক। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের হারুন শেখের স্ত্রী পপি খাতুন, তুলশীবরাট গ্রামের জহুরুল মিয়া স্ত্রী রাফেজা বেগম, মিঠুন বিশ্বাসের স্ত্রী শেফালী বেগম ও বিল্লাল মন্ডলের স্ত্রী আছিয়া বেগমের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতদেরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী থেকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়াগামী কালুখালী ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া গ্রাম স্টেশনে প্রবেশের আগে সোলাকুড়া অরক্ষিত রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় রাজ্জাক জুট মিলের শ্রমিকদের বহনকারী ইঞ্জিনচালিত কটাং গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ট্রেনটি কটাং গাড়িকে টেনে ছেচড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় তিনজন। আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার সময় কয়েকজন যাত্রী কটাং গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পান।
দুর্ঘটনায় আহত পপি খাতুন জানান, রাজ্জাক জুট মিলের ১৪ জন শ্রমিক কাজ শেষে ইঞ্জিন চালিত কটাং গাড়ীতে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই গাড়িতে করে শ্রমিকদের আনা নেয়া করা হয়ে থাকে। ট্রেন আসতে দেখে তাদের বহনকারী গাড়ির চালককে থামতে বলেছিলেন। কিন্তু চালক তাদের কথা উপেক্ষা করে গাড়ি চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে ট্রেনটি এসে গাড়ীটি ধাক্কা দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার নিয়ে যায়।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আইনুল হোসেন জানান, বালিয়াকান্দি উপজেলার সোলাকুড়া রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। সেখানে কোনো গেটম্যান নেই। এছাড়া নলিয়া গ্রাম স্টেশনেও কোনো মাস্টার নেই। দুর্ঘটনার বিষয়টি তিনি স্থানীয় জিআরপি থানাকে অবহিত করেছেন।
রাজবাড়ী জিআরপি থানার ওসি আকবর হোসেন জানান, খবর পেয়ে জিআরপি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। এব্যাপারে একটি ইউডি মামলা হয়েছে।